Friday, October 6, 2017

পুরান এর প্রকৃত পরিচয়

বর্তমান সময়ে বেদ এবং পুরান এর সম্পর্ক এবং এদের পারস্পরিক সাংঘর্ষিকতার বিষয়টা নিয়ে একটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।বেদ এর সাথে পুরানসমূহের সাংঘর্ষিকতা এবং পুরানসমূহের প্রচলন বৈদিক সভ্যতার পতন ও বৈদিক ধর্মের অবক্ষয় এর মূল কারন।পুরান বলতেই আমরা ৩৬টি প্রচলিত পুরান(১৮টি প্রধান পুরান ও ১৮টি উপপুরান) কে বুঝি।কিন্তু আসলেই কি তাই?

আমাদের ১৮টি পুরান এবং ১৮টি উপপুরান আছে যেগুলো ব্যসদেব কর্তৃক লিখিত বলে কথিত।এই পোষ্টে পুরানসমূহের প্রকৃত পরিচয় সম্বন্ধে আলোকপাত করা হবে।

পুরানসমূহকে পঞ্চম বেদ এর ন্যয় মর্যাদা দেয়া হত।এটা বৈদিক যুগে পুরানসমূহের গুরুত্বপূর্ন অবস্থান নির্দেশ করে।

শ্রুতিশাস্ত্রে পুরান এর উল্লেখ-
"রিচা সামানি ছন্দমসি পুরানাম যজুসা সহ উচ্ছিস্টজ্জানি রে সর্বে দিবি দেবা দিবি স্মৃতহ"
(অথর্ববেদ ১১.৭.২৪)
এবং
ইতিহাসাং চ পুরানাং চ গাথা চ ইতিহাসস্য চ স বায় পুরানস্য চ গাথানাম চ নরসংসাম চ প্রিয়ম ধামা ভবতি য ইবম বেদ
(অথর্ববেদ ১৫.৬.১১-১২)

অর্থাত্‍ ঋগ,সাম,যজু ও অথর্ব ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত,ঠিক তেমন পুরান,ইতিহাস,গাথা,কল্প ও সকল দেবসমূহও তাঁর থেকে সৃষ্ট।

ছান্দেগ্য উপনিষদ বলেছে-
"ইতিহাসপুরানাম পঞ্চম বেদানাহ বেদহ"
(ছান্দেগ্য উপনিষদ ৭.১.২,৭.১.৪)
অর্থাত্‍ ইতিহাস পুরানসমূহ যেন পঞ্চম বেদরুপ।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে পুরানসমূহ অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে এবং এগুলো বেদ বুঝতে সহায়ক।

বেদদ্রষ্টা এবং উপনিষদ রচয়িতা মুনিগন(যেমন ছান্দেগ্য উপনিষদ রচয়িত ঋষি উদ্দালক ,সনত্‍কুমার,সান্দিল্য মুনি কর্তৃক) সত্য এবং ত্রেতা যুগে জন্মগ্রহন করেন।

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যসদেব দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহন করেন।

উপরের পয়েন্টগুলো থেকে এটা পরিস্কার যে পুরানসমূহের রচয়িতা এবং পুরানসমূহ বেদদ্রষ্টা ঋষিদের এবং বেদ এর অনেক পরে এসেছে।

সুতরাং বেদ এবং উপনিষদ এ উল্লেখিত পুরানসমূহ বর্তমান এ প্রচলিত ৩৬টি পুরান নয় কেননা তখন ওই গ্রন্থগুলোই ছিলনা এবং তাদের গ্রন্থকারদের জন্ম ই হয়নি।

 সুতরাং পুরানসমূহ যার কথা বেদ এবং উপনিষদ এ উল্লেখিত তা বর্তমানে প্রচলিত ৩৬টি পুরাণ নয়।তাহলে এখন প্রশ্ন হল পুরান কোনগুলো যার কথা বেদ ও উপনিষদ এ এত গুরুত্বের সাথে বলা হয়েছে? 

মহাভারত এ ব্যসদের বলেছেন বেদ বোঝার জন্য পুরানসমূহ প্রয়োজন-

"তথা হি মহাভারতে মানবিয়ে চ ইতিহাস পুরানাব হ্যম বেদম সমুপব্রহ্ময়েত বিভেয়ি অল্পশ্রুতদ বেদো মম অয়ম
প্রহরীস্যতি ইতি
পুরানাম পুরানাম ইতি চন্যয়ত্র্য
ন চ বেদেন বেদেস্য ব্রহ্মনম সম্ভবতি ন
য অপরিপুর্নস্য কনক
বলয়সি অ ত্রপুনা পূর্নম যুজ্যতে"
(মহাভারত আদি পর্ব,১.২৬৭,২৬৮)

বর্তমানে প্রচলিত পুরানসমূহের মতে ব্যসদেব মহাভারত লেখার ও বহুকাল পরে পুরানসমূহ রচনা করেন।যদি তাই হয়ে থাকে তবে মহাভারত এ পুরান শব্দটি এলো কি করে?কেননা তখন পর্যন্ত তো পুরান বলে তো কিছু ছিলই না!এর মাধ্যমে মহাভারত এ উল্লেখিত পুরান মহাভারত এর আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল।

অর্থাত্‍ বর্তমানে প্রচলিত ৩৬টি পুরান মহাভারত এ উল্লেখিত পুরানসমূহ নয়।

*ঐতরেয়,শতপথ,গোপথ ও সাম-এই চারটি ব্রাহ্মন গ্রন্থ ই হল বেদ,উপনিষদ ও মহাভারত এ উল্লেখিত অতীব গুরুত্বপূর্ন পুরান!

এই চার ব্রাহ্মন গ্রন্থের অপর নামগুলো হল ইতিহাস,পুরান,কল্প,গাথা এবং নরসংশি।

¤যখন ব্রাহ্মন গ্রন্থে বিভিন্ন পুর্বাপর ঘটনা বর্ণিত থাকে তখন তার নাম হয় ইতিহাস(যেমন ঐতেরিয় ব্রাহ্মন এ যাজ্ঞবল্ক্যসহ বিভিন্ন ঋষির ইতিহাস)

¤ব্রাহ্মন গ্রন্থসমূহে যখন সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয় তখন তার নাম হয় পুরান(শতপথ ব্রাহ্মন এর সৃষ্টিতত্ত্ব)

¤যখন বৈদিক শব্দের ব্যকরন ও অর্থ এবং তার ব্যুত্‍পত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয় তখন এদের নাম হয় কল্প

¤যেহেতু বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে সেহেতু আরেক নাম গাথা।

¤অনেক স্থানে বিভিন্ন কাহিনীর মাধ্যমে ভাল-মন্দের নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়েছে তাই আরেক নাম নরশংশি।

পুরান এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে সায়নাচার্য বলেছেন-

"ইদম নৈব কিমছনসিন্নদ রসিতিত্যদিবম।
জগতঃ প্রগনবস্থাম উপক্রম্য স্বর্গপ্রতিপদ একম বাক্যথতম পুরানাম"
(Aiterya Aranyaka,shayana bhumika)

অর্থাত্‍ সৃষ্টির পূর্বে শুধু সেই এক ও অদ্বিতীয় ই বিরাজমান ছিলেন।সৃষ্টির পর তাঁর সৃষ্টির তত্ত্ব নিয়ে যেগুলো আলোচনা করল সেগুলো পুরান।

আরো স্পষ্ট করে দিতে এবং মানুষ যাতে দ্বিধায় না ভুগে সেজন্য বলেছেন,

"ন ব্রহ্ম যজ্ঞ প্রকারনেমন্ত্র ব্রাহ্মনব্যতিরেকে ত ইতিহাস্যেভাগ অম্লয়ন্তে"
অর্থাত্‍, ব্রহ্ম যজ্ঞে মন্ত্র উচ্চারন করা হয় যে ব্রাহ্মনসমূহথেকে সেগুলো ব্যতিরেক অন্য কোন গ্রন্থ ই পুরান নয়।

এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে বৈদিক যুগে যজ্ঞের পরে যজমানরা ব্রাহ্মন গ্রন্থসমূহ থেকে সৃষ্টিসুক্ত সমূহ উচ্চারন করত যে কারনে এসব গ্রন্থকে পুরান বলা হত।

তৈত্তিরীয় আরন্যক এর ২.৯ এ স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে-
"য়দ ব্রাহ্মনি ইতিহাস পুরানানি কল্পন গাথা নরসংশি"
অর্থাত্‍ মন্ত্রের বিষয় ভিত্তিতে ব্রাহ্মন গ্রন্থসমূহই পুরান,ইতিহাস,কল্প,গাথা ও নরসংশি নামে পরিচিত।

সুতরাং এটা পরিস্কার যে বেদ,উপনিষদ ও মহাভারতে উল্লেখিত পুরান হল ব্রাহ্মনগ্রন্থসমূহ এবং প্রচলিত ৩৬টি পুরানসমূহ(বিষ্ণু পুরান,নারদিয় পুরান,অগ্নি পুরান,পদ্ম পুরান,গঢ়ুড় পুরান,মার্কন্ডেয় পুরান,শিব পুরান,লিঙ্গ পুরান,স্কন্দ পুরান ইত্যাদি) প্রকৃত পুরান নয়।আরো খেয়াল করে এই পুরানসমূহ পড়লে বোঝা যায় যে নানারকম ভূল,অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তব কাহিনীতে পরিপূর্ন,অশ্লীলতায় ভরা এই বিকৃত পুস্তকসমূহ মোটেও মহর্ষি ব্যসদেব এর লেখা নয় বরং কিছু ধর্মব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের ফসল।

সুতরাং সনাতন এর ঐক্যের স্বার্থে এবং বৈদিক ধর্মের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের জন্য এইসব মিথ্যা গ্রন্থ আমাদের বর্জন করা উচিত
লেখার সম্পুর্ন রাইটঃ অগ্নিবীর বাংলাদেশ শাখার।

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts