ভগবান শিব সম্পর্কে কিছু মূল্যবান তথ্য
- · ভগবান শিব থেকে সমস্ত কিছুর সৃষ্টি। সমস্ত দেবতার সৃষ্টির আগে থেকে উনি ছিলেন তাই উনাকে দেবাদিদেব বলা হয়। (শিব পুরান)
- · ভগবান শিব অজাত শত্রু। মানে উনার কোন শত্রু নাই। দেবতা, অসুর, মানব, যক্ষ, পিশাচ, ভূত ইত্যাদি সবাই উনাকে উপাসনা করেন। যে কোন সিদ্ধান্ত বা ন্যায় বিচারের জন্য সবাই উনার শরনাপন্ন হন।
- · ভগবান শিবের মূর্তি পূজা হয় না। প্রভু সব সময় সবাইকে শিব লিঙ্গে (চিহ্ন) পূজা দিতে উৎসাহিত করেন। উনি লিঙ্গে সদা জাগ্রত। এমন কি রাবন যখন উনার কাছে বর পান যে উনার স্থাপিত মন্দিরে উনি জাগ্রত থাকবেন তখনও প্রভু রাবনকে শিব লিঙ্গ দিয়ে তা স্থাপন করতে বলেন। (বাল্মিকি রামায়ন)।
- · ভগবান শিব অল্পে তুষ্ট। সামান্য জল ও বিল্ব পত্রে উনি অনেক খুশী হন। উদাহরন হিসাবে বলা যায়। মাতা সতি যখন দক্ষের বিষ্ণু মন্দিরের স্থাপন করতে যাচ্ছিলেন তখন দক্ষ শিব হিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সতি তা জানতেন না। বিষ্ণু মূর্তি কোনভাবেই মন্দিরে ঢুকাতে পারছিলেন না কেউ। সবশেষে যখন সতি সেইখানে শিব লিঙ্গ রাখেন ও শুধু বিল্ব পত্রের মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবান কে আহবান করেন। ভগবান শিব তখন প্রকট হন ও দক্ষের বিষ্ণু মন্দির স্থাপন হয়। (শিব পুরান )
- · একবার শিব নামে অনেক পুণ্য। এর বহু প্রমান আছে। এক ব্যাধ শিকার করতে করতে অজান্তে শিব রাত্রি ব্রত পালন করে লিঙ্গে জল ও বেল পত্র দিয়ে অভিষেক করান। ফল স্বরূপ উনি মৃত্যুর পর মুক্তি লাভ করেন ও শিব লোকে স্থান পান। (শিব পুরান)
- · ভগবান শিব এর হাতে ত্রিশুল এর অনেক কারন ও অর্থ আছে। আমি অন্যতম ২ টি কারন এইখানে আলোচনা করবো।
- ত্রিশুলের তিন অংশ সৃষ্টির তিন অবস্থা
সৃষ্টি ,স্থিতি ও প্রলয়ের ইঙ্গিত করে। এর মানে হল। উনার থেকেই সব কিছুর শুরু আবার
উনাতেই সব কিছু মিলিয়ে যাবে।
ত্রিশুল আবার সত্ত্ব, রজ ও তম গুনের প্রতীক। তার মানে উনি এই তিন গুনেরও স্বরূপ। - ভগবান শিব চন্দ্রকে দক্ষের অভিশাপ থেকে বাঁচিয়েছিলেন ও নিজের জটায় ধারন করেছিলেন। তাই উনার আর এক নাম চন্দ্রনাথ বা চন্দ্রশেখর।
- · ভগবান শিবের ১৯ জন অবতার আছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন
দুর্বাসা
বীরভদ্র
কাল ভৈরব
অশ্বথামা ইত্যাদি।
- · ভগবান শিব বৈদিক দেবতাদের মাঝে অন্যতম একজন দেবতা যাকে রুদ্র নামে বার বার স্রষ্টার প্রত্যক্ষ স্বরূপ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।এখানে উল্লেক্ষ্য সাম বেদ প্রায় পুরোটাই ভগবান শিবের স্তব ও স্তুতি করা হয়েছে।ঋষি অথর্ব্ব প্রভু শিবের কৃপাতে মহাপবিত্র অথর্ব্ববেদ রচনা করেন।
- · শুধু বেদ নয়। বেদান্ত, বেদাঙ্গ, উপনিষদ সহ প্রায় সর্ব শ্রুতি ও সৃতি শাস্ত্রে উনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
·
আমরা সবাই জানি সনাতন ধর্ম একটি পূর্ণাঙ জীবন বিধান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির
অসাধারন সমন্বয় একমাত্র সনাতন ধর্মেই আছে। এই ধর্মে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে যেমন
আলচনা করা হয়েছে তেমনি দৈনন্দিন জীবনের সুক্ষ্যাদি সুক্ষ্য বিষয়েও আলোচনা করা
হয়েছে। যেমন সুগন্ধি শিল্প। পাঠক মনে করতে পারেন এর সাথে শিবের কি সম্পর্ক ?
- পাঠকের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি। আয়ুর্বেদ , বাস্তু শাস্ত্র, কাম শাস্ত্র থেকে জ্যোতির্বিদ্যা সব কিছুর জ্ঞ্যান ভগবান শিব ঋষি ও মুনিদের দান করেন। যার কারনে উনারা ইহা লিপিবদ্ধ করেন আর মানুষ আজ এসব জ্ঞ্যান চর্চা করতে পারছে।
- · ভগবান শিব নৃত্য ও কলারও জনক। আধুনিক বিশ্বে আমরা যে ভাস্কর্য শিল্প বা আর্ট দেখি তার জ্ঞ্যান মানব জাতিকে প্রভু শিব শঙ্কর দান করেন।
- · শিব যুদ্ধ বিদ্যার জনক। তাছাড়া উনি অস্ত্রের স্রষ্টা। যার কারনে পরশুরাম এর কুঠার থেকে ভগবান বিষ্ণুর চক্র পর্যন্ত উনার দান। দেব সেনাপতি কার্ত্তিক কর্তৃক তারকাসুর বধ সম্ভব হয়েছিল কারন প্রভু স্বয়ং কার্তিকের যুদ্ধ বিদ্যার গুরু ছিলেন।
·
ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সেরা ২ জন অবতার রাম ও শ্রী কৃষ্ণ পরম শিব ভক্ত ছিলেন।
যার প্রমান আমরা রামায়ন ও শিব গীতাতে পাই। তাছাড়া মহাভারতের শান্তি পর্বে আমরা পাই
“মহাভারতের কৌরব পান্ডবদের যুদ্ধ শেষে একদিন শ্রীকৃষ্ণ ভগবান শিবের অর্চনা করছিলেন
তখন অর্জুন সেখানে উপস্থিত ছিলেন । অর্জুন তখন শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেন " তুমি তো ভগবান তবে তুমি কেন শিবপূজা কর ? " উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন " হে অর্জুন আমি যদি ভগবান শিবকে পূজা না করি তবে
আমি কৃষ্ণের পূজা ভবিষ্যতে কেউ করবে না । "
শ্রী কৃষ্ণের রচিত সহস্রনাম স্তোত্র
ভগবান শিবের একটি শ্রেষ্ঠ স্তোত্র ।