Saturday, April 20, 2024

দ্বৈতবাদীদের জন্য - শিব (সোম ) থেকেই নারায়নের সৃষ্টি

আমার এই লেখাটা ঐসব মধ্যযুগীয় বিভেদকামী বৈষ্ণবদের জন্য , যারা মনে করে নারায়ণ , গোবিন্দ, কৃষ্ণ বড় আর পরমেশ্বর শিব ছোট। অদ্বৈতবাদীদের জ্ঞ্যাতার্থে জিনি হর তিনিই হরি।  


পবিত্র বেদশাস্ত্রে পরমেশ্বর শিবের সোমরূপ থেকেই শ্রীবিষ্ণুর সৃষ্টির তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে -

ঋগ্বেদে ( নবম মণ্ডল / ৯৬ নং সুক্ত / নং মন্ত্র) বলা হয়েছে -

 

সোমঃ পবতে জনিতা মতীনাং জনিতা দিবো জনিতা পৃথিব্যাঃ।

জনিতাগ্নের্জনিতা সূর্যস্য জনিতেন্দ্রস্য জনিতোত বিষ্ণোঃ।।

 

অর্থঃ স্তুতি, দ্যুলোক,পৃথিবী, অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র এবং বিষ্ণুকে উৎপন্ন বা সৃষ্টিকারী সোম সর্বদা শুদ্ধ তথা সকল দোষাবহ গুণ হইতে মুক্ত।

ঋগ্বেদ ৯/২৬/৫

 

.পরমেশ্বর শিবের নিশ্বাস স্বরূপ নিগম তথা বেদশাস্ত্রে সোম পদ দ্বারা একমাত্র পরমেশ্বর শিব দেবী উমার একত্র রূপকেই স্তুতি করা হয়েছে। এজন্যই শুক্ল যজুর্বেদের অন্তর্গত শতরুদ্রিয় বা শ্রীরুদ্রমের ৮ম অনুবাকে শিবকে সোমপদ দ্বারা স্তুতি করা হয়েছে। যথা-

 

নমঃ সোমায রুদ্রায চ।১

 

.এই মন্ত্রের ভাষ্যে আচার্য্য মহীধর বলেছেন- উমযা সহিতঃ সোমঃ তস্মৈ।

অর্থঃ উমা সহিত পরমেশ্বর রুদ্রের রূপই হলেন সোম।

 

.বেদভাষ্যকার উবটাচার্য এই মন্ত্রের ভাষ্যে বলেছেন - নমঃ সোমায রুদ্রায নামতো নমস্কারাঃ।

অর্থঃ শিবকে সোম, রুদ্র এসব নাম দ্বারা নমস্কার করা হয়েছে।

 

.বেদভাষ্যকার সায়ণাচার্য এই মন্ত্রের ভাষ্যে বলেছেন - উমযা সহ বর্তত ইতি সোমঃ।

অর্থঃ উমা সহিত রুদ্রের রূপই হলেন সোম।

 

.বেদভাষ্যকার ভাষ্করাচার্য শতরুদ্রিয় এর ভাষ্যে বলেছেন

রুদ্রপশুপত্যাদিশব্দানাং পুনরভিধানং দেবস্যানুগ্রাহকরূপতামপি প্রখ্যাপযিতুম্।
নমঃ
সোমায চ।
উমযা
সহিতঃ সোমস্তস্মৈ।

 

অর্থঃ রুদ্র, পশুপতি অন্যান্য শব্দের পুনরাবৃত্তির উদ্দেশ্য হলো পরমেশ্বরের অনুগ্রহ রূপকে প্রকাশ করা।সোমকে প্রণাম, সোম হলো উমার সহিত রুদ্র রূপ।

 

.এছাড়াও শৃঙ্গেরী পূর্ব মঠাধিশ্বর অভিনবশঙ্করাচার্য শ্রীরুদ্রমের ভাষ্যে একই ধরনের কথা বলেছেন-
(নমঃসোমাযেতিবিশেধিতম্উমযা সহিতঃ সোম)

 

সুতরাং সোম যে পরমেশ্বর শিবেরই একটি রূপের নাম তা বেদভাষ্যকারদের দ্বারা প্রমাণিত।

 

.এছাড়াও কৃষ্ণ যজুর্বেদের তৈতরীয় সংহিতার চতুর্থকাণ্ডে ( //১৭)  যে শ্রীরুদ্রম্ পাওয়া যায় সেখানেও রুদ্রকে. নমঃ

সোমায রুদ্রায প্রভৃতি মন্ত্রে স্তুতি করা হয়েছে।

 

.অথর্ববেদের অন্তর্ভুক্ত ভস্মজাবাল উপনিষদের ২য় অধ্যায়ে বলা হয়েছে -

ব্রহ্ম সোমো'হং পবনঃ সোমো'হং পবতে সোমো'হং জনিতা মতীনাং সোমো'হং জনিতা পৃথিব্যাঃ সোমো'হং জনিতা'গ্নেঃ সোমো'হং জনিতা সূর্যস্য সোমো'হং জনিতেন্দ্রস্য সোমো'হং জনিতোত বিষ্ণোঃ সোমো'হমেব জনিতা যশ্চন্দ্রমসো দেবানাং ভূর্ভুবঃস্বরাদীনাং সর্বেষাং লোকানাং ||

বিশ্বং ভূতং ভুবনং চিত্রং বহুধা জাতং জাযমানং যৎ |

সর্বস্য সোমো'হমেব জনিতা বিশ্বাধিকো রুদ্রো মহর্ষিঃ ||

 

অর্থঃ আমি (শিব) সোম ( উমাসহিত ), ব্রহ্ম, পবন।আমি সেই সোম যা সূত্ররূপ  পবন যা সকল কিছুকে পবিত্র করে দেয়। আমি মতি আদি জন্মদানকারী সোম ( উমাসহিত ) আমিই পৃথিবী, অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র, বিষ্ণু প্রভৃতির জনক সোম তথা উমাসহিত পরমেশ্বর।এই চন্দ্রমা ভূঃ র্ভুঃ স্বঃ-আদি সর্বলোক উৎপন্নকারী সোম ( উমাসহিত পরমেশ্বর )

বিশ্ব, ভূত, ভুবন, চিত্র আদি উৎপন্নকারী  আমিই সোম তথা উমাসহিত পরমেশ্বর। আমি জন্মদাতা রূপে বিশ্বের কারণ হয়েও কারণাতীত বিশ্বাধিক রুদ্র,আমিই মহর্ষি।

 

.ঋগ্বেদের ৬ষ্ঠ মণ্ডলের ৭৪ নং সুক্ত সমগ্রটাই সোমরুদ্রের প্রতি সমর্পিত।তথায় বলা হয়েছে -

 

সোমারুদ্রা যুবমেতান্যস্মৈ বিশ্বা তনূষু ভেষজানি ধত্তম্।

অব স্যতং মুঞ্চতং যন্নো অস্তি তনূষু বদ্ধং কৃতোমেতো অস্মৎ।।৩

 

অর্থঃ হে সোমরুদ্র,আপনি আমাদের শরীরের উপকারকারী সকল ঔষধি ধারণ করুন।আমাদের দ্বারা কৃত পাপ আমাদের শরীরে বেঁধে আসে, এটিকে শিথিল করে দূর করুন।

 

তিগ্মাযুধৌ তিগ্মহেতী সুশেবৌ সোমরুদ্রাবিহ সু মূলতং নঃ।

প্র নো মুঞ্চতং বরুণস্য পাশাদ্ গোপাযতং নঃ সুমনস্যমানা।।৪

 

অর্থঃ হে সোমরুদ্র, আপনি দীপ্ত ধনুষের ন্যায়, তেজ বাণের ন্যায় এবং শোভন সুখ প্রদান কারী।শোভন স্তোত্রের ইচ্ছা করতে আপনি এই সংসারে আমাদের সুখী বানান, বরুণের পাশ থেকে আমাদের মুক্ত করুণ এবং আমাদের রক্ষা করুন।

 

এজন্যই পরমেশ্বর শিব বৈদ্যনাথ রূপে খ্যাত। এবং তাঁকে শ্রুতিতে পাশবিমোচক বলা হয়েছে।

 

.এছাড়াও হংস উপনিষদে ( ১৪ নং মন্ত্র)  এবং একাক্ষর উপনিষদ ( নং মন্ত্র)  অনুসারেও শিবই সোম।

 

.সোম থেকেই যে বিষ্ণুর উৎপত্তি তা ইতিহাস শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত শিবরহস্য শাস্ত্রে ( ১২ তম অংশ/ নং অধ্যায় ) বলা হয়েছে -

 

সূর্যস্য জনিতা সোম ইন্দ্রস্য জনিতা শিবঃ।

বিষ্ণোর্বৈ জনিতা সোমঃ সর্বেষাং জনিতা হরঃ।।১৩

 

অর্থঃ সূর্যের জন্ম সোমরূপ থেকে,ইন্দ্রের জন্ম শিব থেকে। বিষ্ণুর জন্ম সোমরূপ ( উমাসহিত শিব) থেকে, এবং সর্বোলোকের জন্ম হর থেকে।

 

একই শাস্ত্রের (১৩ তম অংশ / নং অধ্যায়)  বলা হয়েছে -

 

সোমো'যং জনিতা দেবো বিষ্ণোশ্চাপি ত্রিযম্বকঃ।

এষো'ন্তরা মহাদেব আদিত্যে শ্রুযতে বিভুঃ।।২১

 

অর্থঃ সোমদেব থেকে বিষ্ণুর সৃষ্টি, যিনি ত্র্যম্বক নামেও পরিচিত। সেই বিভু মহাদেব আদিত্যেরও অভ্যন্তরীণ আত্মাস্বরূপ যা শ্রুতিতে বর্ণিত।

 

মহাভারতে ( /২০২/১৪১) বলা হয়েছে -

 

উরুভ্যামর্ধমাগ্নেযং সোমার্থং শিবা তনুঃ।

আত্মতো'র্থে তথা চাগ্নি সোমো'র্থেং পুনরুচ্যতে।।

 

অর্থঃ শিব তনুর নিচের ভাগ তথা উরুর হলো অগ্নি এবং শিবতনুর উপরের ভাগ হলো সোম।অনেকের মতে শিবের সমগ্র দেহের অর্ধেক হলো অগ্নি এবং অর্ধেক হলো সোম।

 

.কূর্মপুরাণের ( উপরিভাগ /২৯ নং অধ্যায়)  বলা হয়েছে -

 

নমঃ সোমায় রুদ্রায মহাগ্রাসায হেতবে।

 প্রপদ্যেহং বিরূপাক্ষং শরণ্যং ব্রহ্মচারিণম্। ৪৫

 

অর্থঃ হে শিব, তুমি সোম, রুদ্র,মহাগ্রাসী, তুমি জগতের হেতু, তুমি বিরুপাক্ষ, জগৎ এর শরণ্য ব্রহ্মচারী, আমি তোমাতেই আশ্রয় নিলাম।

 

.পদ্মপুরাণের ( পাতালখণ্ড / ৬৪ নং অধ্যায় )  বলা হয়েছে -

 

শিবস্য শিবরূপ শিবতত্ত্বার্থবেদিনঃ।

সোমস্য সোমভূষস্য সোমনেত্রস্ব রাজিসু।।১০৮

 

অর্থঃ শিব মঙ্গলরূপী  শিবতত্ত্বার্থবিৎ,সোম, চন্দ্রভূষিত, চন্দ্র তার নেত্র।

 

.এছাড়াও মহাভারতের অনুশাসন পর্বোক্ত শিবসহস্রনামে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

.লিঙ্গপুরাণোক্ত শিবসহস্রনামে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

.বেদসারখ্য শিবসহস্রনামে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

.শিবপুরাণোক্ত শিবসহস্রনামে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

. স্কন্দপুরাণোক্ত শংকর সংহিতায় শিবনামাষ্টোত্তরশতে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

.শাক্ত শ্রীকূলের আচার্য ভাস্করাচার্য শিবনামকল্পলতাবাল স্তোবে শিবকে সোম বলেছেন।

 

.অপ্পয়দীক্ষিতের কনিষ্ঠ ভ্রাতা নীলকণ্ঠ দীক্ষিত শংকর সংহিতার শিবনামাষ্টোতত্তরশতের শিবতত্ত্বরহস্য নামক ব্যাখ্যায় সোম পদ বিশ্লেষণ করে বলেছেন -

 

উমযা সহিত সোমঃ,উমাসহাযং পরমেশ্বরং প্রভুম্ ইতি শ্রুতেঃ।.........সোমঃ পবতে জনিতা মতীনাং জনিতা দিবো জনিতা পৃথিব্যাঃ।জনিতাগ্নের্জনিতা  সূর্যস্য জনিতেন্দ্রস্য জনিতোত বিষ্ণোঃ।"অযং সোম কপর্দিনে "ইতি শ্রুতিরপ্যুপন্না।....তথা চোক্তং স্কান্দে সনৎকুমারসংহিতাযাং কাশীগতাদাল্ভ্যেশ্বরলিঙ্গকথাপ্রস্তাবে-মতীনাং দিবঃ পৃথ্ব্যা বহ্নেঃ সূর্যস্য বজ্রিণঃ।সাক্ষাদপি #বিষ্ণুোঞ্চ_সোমো_জনযিতেশ্বরঃ। এবং জাতঃ পুনঃ সোমঃ পুনাপি সকলাঘতঃ।সোমো বৈ হ্যাত্মনঃ সোমমাত্মনং বেত্তি শঙ্করঃ,ইতি।...."রুদ্র হুতঃ "ইতি সোমহুতে.....

 

.বেদসারখ্য শিবসহস্রনামের ভাষ্যে শৃঙ্গেরী শঙ্করাচার্য শ্রীমৎপরমশিবেন্দ্র সরস্বতী সোম শব্দ বিশ্লেষণ করে বলেছেন -

 

উমা সংবিদ্রুপা পরা শক্তিঃ।তযা সহ সর্বদা বর্তত ইতি সোম।

 

অর্থঃ উমা পরাশক্তি রূপে বর্ণিত তাহার সহিত সর্বদা শিবের অবস্থানই সোম বলে কথিত।

 

.এছাড়াও শিব মহাপুরাণের বায়বীয় সংহিতায় ( পূর্বখণ্ড / ২৭ নং অধ্যায়)  সোম রূপের সম্পূর্ণ বর্ণনা আছে।

.ব্রহ্মাণ্ড পুরাণেও ( //২৭/১১১-১১২) শিবকে সোম বলা হয়েছে।

উপরোক্ত শাস্ত্র সিদ্ধান্ত অনুসারে পরমেশ্বর শিবের সোম রূপ থেকেই বিষ্ণুদেবের সৃষ্টি হয়েছে।

Tuesday, January 30, 2024

ভাগবত মহাপুরাণে সদা শিব বন্দনা ও শৈবস্কনীর দাবি রুদ্র শিবের ভেদ

 আজকাল নব্য ক্রাইষ্ণবদের পাশাপাশি নব্য কিছু শৈবদের আবির্ভাব হয়েছে যারা নামে শুধু শৈব কিন্তু কাজে কর্মে নামধারী ক্রাইষ্ণবদের মতই বিভেদ ছড়ায়। 

এদের কথায় শিব হলেন দাস, অথবা রুদ্র হলেন সদা শিব থেকে আলাদা। আসুন আজ এই ২ মূর্খদের কিছু উত্তর দেয়া যাক। 

ক্রাইষ্ণবদের পক্ষঃ সাধারণত আন্তর্জাতিক ম্লেচ্ছ সংঘটন ইসকন ( পড়ুন চুষকন) এই ব্যাপারটা ছড়ায়। 


শিবজি হলেন পরমেশ্বর ভগবান কৃষ্ণের দাস। উনি পরম বৈষ্ণব। উনি আমাদের দ্বাদশ মহাজনের মাঝে একজন। উনি আমাদের কৃষ্ণ ভক্তি শিক্ষা দেন।

খুব হাস্যকর এইসব যুক্তি যা এদের নব্য  মধ্যযুগীয় গুরুদ্রোহী পাপীদের দ্বারা লিখিত। 

আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি,কোন পুরাণ পরমেশ্বর সদা শিবকে হেয় করা বা দাস বানানো এইগুলা করে নাই। বরং আদি পিতা হিসাবে মান্য করেছেন। 

প্রমাণ স্বরূপ আসুন ওদের প্রাণ ভ্রমরা ভাগবত পুরাণ থেকে প্রমাণ দেই। 

নিম্নে দেখুন শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ থেকে সদা শিব মাহাত্ম্য দিচ্ছি । 

প্রজাপতয় উঁচুঃ


দেবদেব মহাদেব ভূতাত্মন্ ভূতভাবন। ত্রাহি নঃ শরণাপন্নাংস্ত্রৈলোক্যদহনাদ্ বিষাৎ।। ২১


ত্বমেকঃ সর্বজগত ঈশ্বরো বন্ধমোক্ষয়োঃ। তং ত্বামচন্তি কুশলাঃ প্রপন্নার্তিহরং গুরুম্।। ২২


গুণময্যা স্বশক্ত্যাস্য সর্গস্থিত্যপ্যয়ান্বিভো। ধৎসে যদা স্বদৃগ্‌ ভূমব্রহ্মবিষ্ণুশিবাভিধাম্।। ২৩


ত্বং ব্রহ্ম পরমং গুহ্যং সদসদ্ভাবভাবনঃ। নানাশক্তিভিরাভাতত্ত্বমাত্মা জগদীশ্বরঃ ।। ২৪


রজাপতিগণ এইভাবে মহাদেবের স্তুতি করলেন-হে দেবতাদের আরাধ্য মহাদেব! আপনি সমস্ত প্রাণীর আত্মা ও জীবনদাতা। আমরা আপনার শরণাগত। ত্রিলোক- ভস্মকারী এই ভয়ংকর তীব্র বিষ থেকে আপনি আমাদের রক্ষা করুন। ২১ । আপনি সমস্ত জগতের বন্ধন ও মোচনের হেতু (প্রভু), সেইজন্য বিচারশীল ব্যক্তিরা আপনাকে আরাধনা করে থাকেন। কারণ, আপনি শরণাগতের ক্লেশহারী ও জগগুরু। ২২ । হে প্রভু! আপনার নিজ গুণময়ী শক্তি দ্বারা এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় করার জন্যে অনন্ত, সর্বদা একরস থাকা সত্ত্বেও আপনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব নাম ধারণ করেন। ২৩ ॥ আপনি স্বপ্রকাশ। এর কারণ এই যে আপনি পরম গুহ্য ব্রহ্মতত্ত্ব।

ভাগবত পুরাণ ৮/৭/ ২০-২৪ 





একই পুরাণের আরেক স্থানে দেখুন পরমেশ্বর শিব নিয়ে ব্যাসদেব কি রচনা করেছেন। 

শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ দ্বাদশ স্কন্ধ দশম অধ্যায় ১৭ নম্বর শ্লোক 


নমঃ শিবায় শান্তায়  সত্ত্বায় প্রমৃড়ায় চ।

রজোজুষেহ প্যঘোরায় নমস্তুভ্যং তমোজুষে। ১৭


আমি আপনার ত্রিগুণাতীত সদাশিব স্বরূপকে ও সত্ত্বগুণযুক্ত শান্তস্বরূপকে নমস্কার করি। আমি আপনার রজোগুণযুক্ত সর্বপ্রবর্তক স্বরূপ এবং তমোগুণযুক্ত অঘোর স্বরূপকে নমস্কার করি। ১৭ ॥


এইবার আসি ভন্ড নব্য শৈবদের নিয়ে কিছু কথায়।


শৈবাস্কনীর দাবিঃ  

ভারতের কোলকাতায় অধুনা ২০২১ এর দিকে জন্ম নেয়া একটি তথাকথিত শৈব সংঘটন সম্প্রতি দাবী করেছেঃ 

আমাদের শৈবদের আরাধ্য সদাশিব । কৈলাসপতি রুদ্রদেব নয় । কৈলাসপতি রুদ্র লোকাচার বশত কখনো কখনো তার ভক্তের প্রশংসা করেন । যেমন - কখনো হরির কখনো আদি শক্তির । এই কৈলাসপতি রুদ্র এবং হরি একে অপরের ধ্যেয় ।

কৈলাসপতি রুদ্রদেব( সদাশিবের )গুনযুক্ত  সত্ত্বা । যিনি মায়ার জগতে নানাপ্রকার লীলা করে থাকেন ।

আমাদের আরাধ্য সদাশিবের অনন্ত  রূপের মধ্যে কৈলাসপতি রুদ্র একটি রূপ । সদাশিবের কয়কটি সরূপের নাম বলা হলো , যাতে আমাদের আরাধ্য সদাশিব এবং তার গুনযুক্ত সত্ত্বা অর্থাৎ কৈলাস শিখরে বসবাসকারী  রুদ্রদেবের ব্যবধান ভন্ড বৈষ্ণবরা  একটু হলেও জানতে পারে । 

এর আগেও এদের প্রধান স্বঘোষিত ফন্ডিত রোহিত আমার কাছে প্রচুর ভুল করে। ফলশ্রুতিতে সে আমাকে লাইভে আমন্ত্রণ জানায়, কারণ সে জানে লিখিতি বিতর্কে সে কখনোই আমার সাথে পারবে না। এরপরেও সে তার হাস্যকর মতবাদ চালিয়ে যাচ্ছে আর তার চ্যালাদের দিয়ে পরমেশ্বর শিবের জাতা করে বেড়াচ্ছে । এক উঠতি পাড়ার গায়ককে নব্য এক গুরু বানিয়ে এরা দীক্ষা অনুষ্ঠানও করছে। পাপের কত বড় রিপ্রেজেন্টেটিভ হলে এরা এইসব কাজ করে? তাছাড়া ঈশ্বর গীতার নাম করে মানুষের কত টাকা মেরেছে তা শিব জানেন। 
এইবার আসি এদের দাবীর ব্যাপারে। খুব হাসি পেয়েছিল এই দাবী শুনে। এরা যে ঠিক মত শিব মহাপুরাণটাও পড়ে নাই এই হল প্রমান। বাকি সব কাজ বাদ দিলাম, ভন্ডের ভন্ডামি শুধু এই ঘটনায় ধরা খেল। 

অন্ধ চ্যালা ছাড়া যারা জিজ্ঞাসু এদের জন্য শিব মহা পুরাণ থেকে প্রমাণ দিছি। সদা শিব এবং রুদ্রে যারা ভেদ দর্শন করে এরা আর যাই হোক শৈব হতে পারে না। অশিক্ষার তিমিরের গভীরে যাদের বসবাস এরাই এই ধরণের কথা বলতে পারে। কারণ শিব মহাপুরাণেই বলা যে শিব এবং রুদ্রে ভেদ করবে সে নরকে পতিত হবে। 

শিব মহাপুরাণ রুদ্র সংহিতা যুদ্ধ খন্ড শংখচূড় বধ দ্রষ্টব্য।




শিব পুরাণ রুদ্র সংহিতা, যুদ্ধ খন্ড  ৩১/৩৮-৪৫


এখানে স্বয়ং সদাশিব বলছেন যে রুদ্র এবং উনাতে কোন ভেদ নেই এবং যারা ভেদ করেন এরা নরকগামী হবে। 

এইটা দেখার পরেও কি সচেতন পাঠকরা এইসব ক্রাইষ্ণব আর ভন্ড শৈবাস্কনীদের ফলো করবেন? আপনাদের বিবেচনা। 

হর হর মহাদেব। 

Saturday, December 2, 2023

অভিনবগুপ্ত নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা


৭৬১ সালের আগে, ৭২৪ সালের পরে কোনো এক সময়ে আজকের উত্তরপ্রদেশের গঙ্গ-যমুনার মধ্যবর্তী অঞ্চল, যাকে পূর্বে মধ্যদেশ বা অন্তর্বেদী বলা হত, সেই অন্তর্বেদী থেকে কাশ্মীরের মহারাজ মুক্তাপীড় ললিতাদিত্য (৭২৪-৭৬০) নিয়ে আসেন সপরিবার এক শৈব ব্রাহ্মণকে। তিনি অত্রিগুপ্ত। গোত্র – অত্রি। এঁর উত্তরপুরুষই হলেন মহামাহেশ্বর আচার্য অভিনবগুপ্ত। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবশত তাঁর শিষ্য প্রশিষ্যাদিক্রমে তাঁকে অভিনবগুপ্তপাদ বা অভিনবগুপ্তনাথও বলা হয়ে থাকে। অভিনবগুপ্ত তাঁর এই পূর্বপুরুষ সম্বন্ধে বলছেন (তন্ত্রালোক, ৩৭.৩৮) – 

নিঃশেষশাস্ত্রসদনং কিল মধ্যদেশ-

স্তস্মিন্নজায়ত গুণাভ্যধিকো দ্বিজন্মা ।

কোঽপ্যত্রিগুপ্ত ইতি নামনিরুক্তগোত্রঃ

শাস্ত্রাব্ধিচর্বণকলোদ্যদগস্ত্যগোত্রঃ ॥

মধ্যদেশ হল সমস্ত শাস্ত্রের (বিদ্যার) আলয়। সেখানে একজন অতিগুণবান কোনো এক বিপ্র জন্ম গ্রহণ করেছিলেন যাঁর নাম ছিল অত্রিগুপ্ত। তাঁর নামই তাঁর গোত্রকে বলে (অর্থাৎ তাঁর গোত্র অত্রি, বা তিনি অত্রিগোত্রীয় ব্রাহ্মণ)। (কিন্তু) শাস্ত্রের সাগরকে তিনি যেভাবে গিলে ফেলেছিলেন তাতে তিনি অগস্ত্যেরই গোত্রীয় বটে।

অভিনবগুপ্ত কত সংখ্যক উত্তরপুরুষ তা জানা যাচ্ছে না। অত্রিগুপ্তের পরেই নাম পাওয়া যাচ্ছে অভিবগুপ্তের ঠাকুরদা বরাহগুপ্তের। এঁর পুত্র নরসিংহগুপ্ত। কাশ্মীর লোকসমাজে এঁর নাম ছিল চুখুলক। ডাক নাম গোছের। নরসিংহগুপ্তের বিবাহ হয় বিমলাদেবীর সঙ্গে। এঁদের সন্তান অভিনবগুপ্ত।

এঁদের নামের সঙ্গে গুপ্তটি এখনকার অমুকচন্দ্র-অমুকনাথ-গোছের। বংশধারায় এমন নাম চলে এসেছে। প্রসঙ্গে বলে রাখি, অভিনবগুপ্তদের পারিবারিক মানুষদের নাম ছাড়াও সমসাময়িক এবং অভিনবপূর্ববর্তী অনেক নাম মেলে যাদের নামের শেষে গুপ্ত-শব্দটি রাখার চল ছিল। এরা একই পরিবারের বিভিন্ন শরিক বা সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের একথা চিন্তনীয়। কেউ কেউ শিবসূত্রের রচয়িতা বসুগুপ্তকে অভিনবগুপ্তের একজন পূর্বপুরুষরূপে বলেছেন বটে, তবে এই বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তাই সেটি গুপ্ত-গুপ্ত-পরিবার গোছের কথা। যাক, এই প্রসঙ্গ নিয়ে আরও বিস্তার করার প্রয়োজন হলে শৈবধারার আলোচানায় করা যাবে।

প্রাচীন আচার্যদের মধ্যে এই আত্মচরিত কথনে বিরত, তাতে অভিনবগুপ্ত নিতান্ত একজন বিলক্ষণ ব্যক্তি। তাঁর মত এত ব্যক্তিগত তথ্যের উপস্থানে তৎপর কষ্টে শিষ্টে কেউ মেলে।








তিনি কাশ্মীরের বর্ণনা দিচ্ছেন, সেখানকার গাছ-নদী-খাদ্যের। তিনি অনেক রাজা ও স্বীয় শিষ্যদের কথা বলছেন। তিনি তাঁর গুরুদের। কার কাছ থেকে কী পেয়েছেন সেই কথাও বলছেন। ন তু এতেনৈব অলম্। এই যথেষ্ট নয়, তিনি তাঁর বিভিন্ন রচনায় রচনাকাল উল্লেখ করে গেছেন। এতো! এতো! এতোটা তো দেখা যায় না। সেই বুদ্ধের বিষয়ে অনেক পর্যাপ্ত তথ্য আছে, তবে সেখানে পরমুখগত আত্মকথা আছে, এখানে সাক্ষাৎ আত্মকথা। আর তাও এতো।

এখানে সব থেকে মজার বিষয়। বিস্ময়ই বটে! বিখ্যাত রাজতরঙ্গিণীকার, এ নিতান্ত অতিশয় নয় তিনিই ভারতীয় তথ্যাবলম্বী রাজকীয় দেশজ ইতিহাসের জনক, পণ্ডিত কল্হণ একটি বারও অভিনবগুপ্তের উল্লেখ করেননি। বিষয়টি এমন একদমই হতে পারে না যে কল্হণ অভিনবগুপ্তকে চিনতেন না। চিনতেন না বলা ভুল হবে, কারণ অভিনবগুপ্তের অন্তর্ধানের অনেক পরে প্রায় ১০৯৫ সালে কল্হণের জন্ম। তিনি অভিনবগুপ্তের শিষ্য বিখ্যাত কবি ক্ষেমেন্দ্রের নৃপাবলি পড়েছেন। এবং সেটির সমালোচনাও করেছেন। আর ক্ষেমেন্দ্রের থেকেই আমরা জানছি অভিনবগুপ্ত তাঁর গুরু। তাঁর কৃপাতেই ক্ষেমেন্দ্র নাট্যাদি সাহিত্যশাস্ত্র এবং কবিত্ব লাভ করেছেন। তাই কল্হণের অভিনবগুপ্ত সংক্রান্ত অজ্ঞতার কোন বীজ থাকাই সম্ভব নয়। যেখানে অভিনবগুপ্ত তাঁর জীবদ্দশাতেই শিবাবতার, ভৈরবের অবতার বলে প্রখ্যাত। যিনি সিদ্ধান্ত, বাম, কুল, ত্রিক, প্রত্যভিজ্ঞা, ক্রম আদি অদ্বৈত শৈববাদের, শুধু তাই নয় কলার প্রভূত দিক, বিশেষত সঙ্গীতশাস্ত্র, সমগ্র ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্র, অলঙ্কারশাস্ত্র, ধ্বনিসম্প্রদায়, রসসম্প্রদায়, অন্যদিকে ব্যাকরণ, তাঁকে অনেকে শেষনাগ পতঞ্জলির অবতার মনে করেছেন তাই তাঁর নাম অভিনবগুপ্তপাদ, গুপ্তপাদ-লুকানো পা অর্থাৎ সাপ অর্থাৎ নাগেশ্বর অনন্ত শেষ অর্থাৎ পতঞ্জলি তিনি অভিনব হয়ে এসেছেন তাই অভিনবগুপ্তপাদ, তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর তন্ত্রালোকে তিনি বেদ থেকে প্রসঙ্গ তুলে তার তান্ত্রিক ব্যাখ্যা করছেন, যে পূর্বপক্ষীরা এই ভৈরবসম্প্রদায়ের শৈবদের কৌলদের অবৈদিক বলে নাক ঊঁচু করছে তিনি সেই সব উড়িয়ে দিচ্ছেন কলমের খোঁচায়, এমন উদ্ভট পাণ্ডিত্য নিয়ে যিনি মূর্ধন্য আচার্য তাঁর সমাজে নিঃসন্দেহে এক প্রতিষ্ঠা এবং বহুজনবিদিততা ছিল।

আমার স্বকীয় একটি বিচার এই প্রসঙ্গে আছে। সেই গুলি কাশ্মীরের রাজপরিবার, কাশ্মীরীয় শৈব-শাক্ত তন্ত্রের পরম্পরা এই সবের সঙ্গে যুক্ত।

Thursday, May 25, 2023

মান্ধাতার আমল বলতে কী বোঝায়?

মান্ধাত্রী বা মান্ধাতা , হিন্দু পুরাণে, একজন ইক্ষ্বাকু রাজবংশের রাজা এবং যুবানাশ্বের পুত্র ছিলেন।[1] তিনি যাদব রাজা শশবিন্দুর কন্যা এবং চিত্ররথের নাতনী বিন্দুমতি চৈত্ররথিকে বিয়ে করেছিলেন। পুরাণ অনুসারে, তার তিন পুত্র ছিল, পুরুকুৎস, অম্বরীষা এবং মুচুকুন্দ। তিনি তার উদারতা এবং উদারতার জন্য সুপরিচিত।


ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের 134 নম্বর স্তোত্রটি তাঁর জন্য দায়ী।


মহাভারত অনুসারে, তিনি ছিলেন সূর্যবংশ রাজা যুবাংশ্বের পুত্র। 

আমরা পুরণো আমলের কোন জিনিসের উপমা দিতে ‘মান্ধাতার আমল’ কথাটা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কে এই মান্ধাতা? কেনইবা তার আমল ইতিহাসে এত উল্লেখযোগ্য? হিন্দুধর্মের ‘বিষ্ণুপুরাণে’ মান্ধাতার কাহিনি পাওয়া যায়। মান্ধাতা ছিলেন সূর্য বংশের একজন রাজা যার জন্ম মাতৃগর্ভে না হয়ে পিতৃগর্ভে হয়েছিল। উল্লেখ্য, এ বংশেই মান্ধাতার বহুকাল পরে রামের জন্ম হয়েছিল। কৃত্তিবাসের রামায়ণে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আছে।






মান্ধাতার পিতার নাম ছিল যুবনাশ্ব। সূর্য বংশের এ রাজার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। সন্তান লাভের আশায় সব চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তিনি মুনিদের আশ্রমে যোগ সাধনা শুরু করেন। মুনিরা যুবনাশ্বের সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তার পুত্র সন্তান উৎপাদনের জন্য এক যজ্ঞ আরম্ভ করেন। যজ্ঞ শেষ হতে রাত গভীর হয়ে গেল। এ সময় মুনিরা একটি কলসি ভর্তি পানিতে মন্ত্র পড়ে ঘুমাতে যান। এই কলসির পানি পান করলে যুবনাশ্বের স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তানের জন্ম হবে।কিন্তু যুবনাশ্ব রাতের বেলা পিপাসায় কাতর হয়ে নিজেই কলসির পানি পান করে ফেলেন। সকালে মুনিরা ঘুম থেকে জেগে পানি পানের ঘটনা শুনে ঘোষণা করলেন - পানি যেহেতু যুবনাশ্ব পান করেছে, সন্তান তার গর্ভেই জন্মাবে। গর্ভধারণের কষ্টের কথা ভেবে ভয় পেয়ে গেলেন যুবনাশ্ব। মুনিরা তাকে গর্ভধারণের কষ্ট থেকে রেহাই দিলেন। একশ বছর পর তার পেটের বাম পার্শ্ব ভেদ করে জন্ম নিলেন মান্ধাতা। কিন্তু পিতৃ-গর্ভে জন্মানো শিশুর জন্য দুধ যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন দেবরাজ ইন্দ্র তার মুখে নিজের তর্জনী দিয়ে বলেছিলেন, 'মামধাস্ততি'-সংস্কৃত এই শব্দের মানে 'আমাকে পান করো।'মাম এবং ধাতা-এই শব্দবন্ধের মিলনই পরে ফোনলজিক্যাল সূত্রে মান্ধাতা নামে উচ্চারণ করা হতে থাকে। এখান থেকেই রাজা মান্ধাতার নামকরণ হয়েছিল।বড় হয়ে মান্ধাতা বাবার রাজ্যের রাজা হলেন। এবার তিনি পৃথিবী জয়ে বেরিয়ে পড়লেন। সুমেরু পর্বতে রাক্ষসরাজ রাবণের সাথে তার তুমুল যুদ্ধ হলো। উভয়ের শক্তি সমান হওয়ায় কেউই পরাজিত হলেন না। হয়ে গেল তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব। এরপরে মান্ধাতা স্বর্গরাজ্য জয়ে বের হলে ইন্দ্র তাকে সারা পৃথিবী জয়ের পর স্বর্গরাজ্য জয় করার চেষ্টা করতে বলেন। কারণ মধুর পুত্র লবণাসুর তখনো তার অধীনতা মেনে নেয়নি। এবারে যুদ্ধ হলো লবণের সাথে। কিন্তু মান্ধাতা আর পারলেন না। নিহত হলেন তার হাতে।

কখন ছিল মান্ধাতার এ আমলটা? হিন্দুধর্ম মতে, মহাকাল (সময়কাল/যুগ) সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগে বিভক্ত। এদের মধ্যে সত্য যুগটা শ্রেষ্ঠ যুগ। সে যুগে কোন পাপ ছিলনা। মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন। সে যুগের রাজা ছিলেন মান্ধাতা। তার আমলটা ছিল হয়তো এখন থেকে লক্ষ লক্ষ বছর আগে। কারণ সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সময়কাল ছিল যথাক্রমে ১৭,২৮,০০০ বছর, ১২,৯৬,০০০ বছর এবং ৮,৬৪,০০০ বছর। আর আমরা যে পাপের যুগে (কলি কাল) বাস করছি তার দৈর্ঘ্য ৪,৩২,০০০ বছর। বোঝা যাচ্ছে, মান্ধাতার আমলটা অনেক প্রাচীন। সুতরাং এজন্যই প্রাচীন বা পুরণো জিনিস বুঝাতে ‘মান্ধাতার আমল’ কথাটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাংলা ভাষায় অনেক আগের কোন সময় বোঝাতে বিভিন্ন রাজা বা নবাবদের আমল অনেকেই বলে থাকেন। তবে পৌরাণিক কাহিনী হলেও মান্ধাতার আমলের চেয়ে পুরনো কোন আমল বাংলা ভাষায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

Friday, March 24, 2023

শিব বলেন আমি ব্রহ্ম আবার বিষ্ণু বলেন আমি ব্রহ্ম তাহলে আসলে কে ব্রহ্ম?

 নমস্কার প্রিয় ব্লগ পাঠক/ পাঠিকাবৃন্দ। 

অনেক শৈব ভ্রাতা/ভগ্নিরা আজকাল প্রশ্ন করেন
" দাদা শিব বলেন আমি ব্রহ্ম আবার বিষ্ণু বলেন আমি ব্রহ্ম । তাহলে আসলে ব্রহ্ম কে?"

দ্বৈতবাদী কৃষ্ণ বা বিষ্ণু ভক্তদের আপনি যদি অদ্বৈত বুঝান এরা তা বুঝবে না। কারণ এঁদের মগজ ধোলাই খেয়ে গিয়ে অবুঝ হয়ে গেছে।  তাই এর উত্তর এঁদের দ্বৈতবাদের ভিত্তিতে দেয়াই সমীচীন


শিবের মায়ায় বিষ্ণু বলেন উনি আসলে ব্রহ্ম 

প্রথমে আসি অদ্বৈতভাবের অন্যতম গ্রন্থ  মহর্ষি সূতের সূত সংহিতার ১/৩/৪ এ। উত্তর ভারতে তা স্বতন্ত্র গ্রন্থ যদিও দক্ষিণের স্কন্ধ পুরাণে এই সূত সংহিতা পাওয়া যায়। 

তো আসুন সেখানে কি বলা আছে দেখি? 








এখানে বলা কি বলা হচ্ছে আসুন দেখে নেই। 

পুরা বিষ্ণুর্জগন্নাথঃ পুরাণঃ পুরুষোত্তমঃ।
মায়য়া মোহিতঃ সাক্ষাচ্ছিবস্য পরমাত্মনঃ।।

ভোগ এবং মোক্ষের জন্য কোন দেবতার পূজা করা উচিৎ? মানে এমন কোন দেবতা আছেন যিনি একাধারে ভোগ মোক্ষ আর ফলপ্রদ । তখন সূত মহারাজ উত্তরে বলছেন,

একবার ভগবান জগন্নাথ যিনি পুরাণ পুরুষোত্তম ( পুরাণ পুরুষদের মাঝে যিনি উত্তম) সাক্ষাৎ তিনি পর্জন্ত  পরমাত্মা শিবের মায়ার দ্বারা মোহিত হয়ে আমি জগত কর্তা , আমার মধ্যেই জগত আছে আমার দ্বারাই জগত স্থিতি হচ্ছে, আমার শক্তিরই সব বিলাস, আমার দ্বারা এই চরাচর সৃষ্টি ইত্যাদি করে গর্বে মত্ত হন এবং তিনি অন্যদের বলেন আমারই পূজা করো । শুধু জগন্নাথ দেব নন, অন্যান্য দেবতারাও মায়া মোহ দ্বারা মোহিত হয়ে যায় সেই সময় যখন এই দেবতারা মায়া দ্বারা মোহিত হয়ে যায় তখন নন্দিকেশ্বর ( শিবের প্রধান গণ) তিনি তাঁদের কাছে আসেন এবং তাঁদের শিবতত্ত্ব খুলে বলেন । 




একই কথা আবার শিব মহাপুরাণের শতরুদ্র সংহিতাও বলছে। কি ? 

১৫ থেকে ১৭ দেখুন। শ্রী ব্রহ্মাকে শ্রী নন্দীশ্বর বলছেন, 


" স্বয়ং শ্রী বিষ্ণুও যিনি কখনও কখনও রেগে যান তিনিও মায়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যান। " 

১৭ তেও শ্রী সূত মহর্ষি যা বলেছেন তাঁর মিল পাচ্ছেন কিনা দেখুন? 

এখন, যারা মায়া দ্বারা মোহিত হয়ে বিষ্ণু বা কৃষ্ণের গুণকীর্তন করতঃ মহাদেব আর দেবী শক্তিকে ছোট বা নীচু দেখান, সমকক্ষ দেখাতে চান না এঁদের জন্য এই হল উত্তর। এখন আপনারা কি বলবেন? সূত মহর্ষি তামসিক? নাকি উনি মূর্খ? মহর্ষি মূর্খ  আর আপনারা এক একজন মহাজ্ঞানী? 

আমার মতে দুই এক আর সেই একই দুই। তাই বিভেদ কাম্য নয়। 

ইস্কন সহ দ্বৈতবাদীরা সনাতন সমাজের একতার পরিপন্থী। এঁদের বর্জন করুন। কারণ এরা শাস্ত্র নিন্দা এবং শাস্ত্র বাক্য বিকৃতি করে। 

Monday, February 6, 2023

ভন্ড শৈবদের জবাব ২

 #issgt_exposed

যারা বোঝার এরা বুঝে এদিকে আর যাবেন না। আর যারা চ্যালা এরা চ্যালাগিরি করুন আর কনফিউসড দল আরও কনফিউসড হন। 

স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্যঃ 





আমার এই বক্তব্যঃ 

 যতটুকু খণ্ডন-মণ্ডনের সাথে জড়িত সম্পূর্ণটাই আমরা ঘেটে দেখেছি। এবং এই অন্তঃসারশূণ্য বক্তব্যের শেষ কথা এটাই - 

১/ঠেকায় পড়লে ভাস্কর রায় এবং উৎপল দেব উভয়েই মান্য। অর্থাৎ খিচুড়ীবাদ তারা সমর্থন করে। 

২/ তাদের দাবী মতে ভাস্কর রায় এবং উৎপল দেব এর মতামত এক - অর্থাৎ উভয়ে ভিন্নবাদ সমর্থন করলেও দিনশেষে রোহিতের খিচুড়ীবাদ রক্ষার জন্য তারা এক। 

৩/ রোহিতের লাইভের বক্তব্যে প্রথমে শুরু হয়েছে - উভয় মত এক নয়। এরপর রোহিত আবার বক্তব্যের শেষে চেইঞ্জ করে বলছেন দুইটাই একই। এক মুখে এতকথা খিচুড়ী না খেলে বলা সম্ভব না। 

৪/ রোহিত বলতে চাইছেন স্পন্দ ও প্রত্যভিজ্ঞা এক না হলেও দুই মতবাদ মান্য- উভয়েই কাশ্মীরি শৈব পরম্পরা অন্তর্ভুক্ত। নতুন করে মান্যতার কী আছে ঠিক বুঝলাম না। মাথা ডানে হেলিয়ে কথা বলে একবার বামে হেলিয়ে। 

৫/শক্তির স্বরূপ জগত- বুঝলাম না। খায় না মাথায় দেয়? 

৬/ বীর শৈব দর্শন ও ভাস্কর রায় সেইম- বুঝলাম না। 

৭/স্বাতন্ত্র্য শক্তি শক্তি না দর্পণ - কি বলেন কিছুই বুঝি না। 

৮/ স্বাতন্ত্র্য শক্তি বিনা বিম্বে প্রতিবিম্ব সিদ্ধ করালে আভাসের কী আছে তাও বুঝিনি, অর্থাৎ আপনার কথায় উৎপল দেবই না স্বয়ং খণ্ডিত হয়ে যান কিনা এই টেনশনে পড়ে গেলাম। স্বাতন্ত্র্য শক্তি পরিণামে অথবা আভাসে জগত প্রতিষ্ঠিত করেন কিনা সেসব আলোচনায় লেশ মাত্র নেই।

৯/ বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ বীরশৈবকে কী বলা যায় কি বলা যায় না - ভগবানই জানে আপনি কী বলতে চান। আমার আর বুঝে কাজ নেই। 

১০/ মোদ্দা কথা হল ত্রিকের প্রচারের জন্য ভাস্কর রায় কেও ডাকা লাগে শ্রীকরকেও ডাকা লাগে শাক্ত শৈবের খিচুড়ী করা লাগে- সম্মানের তলে খিচুড়ী করে পাব্লিক খাওয়ান আর অদ্বৈতবেদান্তীকে ক্রিটিসাইজ করেন- এসব ছাগলামি ছেড়ে দেন।  

১১/ এইবার আপনাদের গুরু পরম্পরা নিয়ে কোথায় কি বললেন ? আপনার চ্যালা তো বড় বড় বুলি ছাড়ছিল। পরুম্পরা কি আপনার? গুরু কে? কবে কখন, কোথায় দীক্ষা হয়েছে আপনার? 

এই হল মাত্র কয়েক মিনিটের ভিডিওতে ভুল। পুরোটা দেখতে পারছি না কারণ কান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল এর ভাট শুনে। আর আমাদের এত সময়ও নেই। 

এইবার , সকলকে জানাতে চাইছিঃ 

কাশ্মীর শৈব দর্শনের স্কলার যিনি কাশ্মীর শৈব দর্শনের বর্তমান অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত এবং প্রফেসর দেবব্রত সেন শর্মা,  ( যার বই থেকে রোহিত কপি পেষ্ট করেছিল), প্রফেসর নবজীবন রাস্তোগী মহাশয়ের সরাসরি শিষ্য , যিনি আবার ঈশ্বর আশ্রম ট্রাষ্ট ফেলোশিপ দ্বারা ভূষিত যা স্বামী লক্ষণ-Joo মহারাজ দ্বারা স্থাপিত । উনি সরাসরি বলেছেন এগুলো একটারও কোন কাশ্মীর শৈব দর্শনের ক ও জানে না। এমনকি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কাশ্মীরি শৈব দর্শনের স্কলার( যিনি শৈব দর্শন নিয়ে পিএইচডি করছেন) তিনিও বলেছেন

 " আমি যতটুকু এদের আর আপনার তর্ক দেখলাম তাতে মনে হল আপনার প্রতিপক্ষ  কাশ্মীর শৈব দর্শনের কিছুই জানে না। আপনি যে লাইভে যান নাই এইটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন। কারণ মূর্খদের সাথে লাইভে যাবার দরকার নেই। আপনি ডকুমেন্ট আকারে যেভাবে চাইছেন সেভাবেই হোক সব। এতে আমাদের পড়তে আর বিতর্ক দেখতে সুবিধা। "

এইবার আপনারাই বোঝেন  এরা কেন ডকুমেন্ট ছেড়ে লাইভে যেতে চাচ্ছে। আমার কাছে কিছু সাম্ভব্য কারণ মনে হচ্ছেঃ 

১. ডকুমেন্টে যুক্তি কাটতে খুব সহজ কিন্তু লাইভে প্রতিপক্ষকে গালাগাল, ব্যাক্তিগত আক্রমণ কিংবা ভুল তথ্য উপাত্ত দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে হারানো যেতেও পারে।(বিশেষ করে যারা মৌখিক বিতর্ক কম করেছেন।)

২. ডকুমেন্টে যেমন তাড়াতাড়ি যুক্তি কাঁটা যায় তা লাইভে সম্ভব না। যা শৈব দর্শনের স্কলারই বলেছেন। 

এরা ভয় পাচ্ছে যে এদের ডকুমেন্টে লড়লে হাজার ভুল ধরা যাবে যা লাইভে সম্ভব নাও হতে পারে।




Sunday, January 29, 2023

ভন্ড শৈব খিচুড়িবাদীদের পাল্টা জবাব প্রদান

যারা ত্রিক দর্শন নিয়ে সামান্য পড়াশোনা করেছেন এরা জানেন যে পরিণামবাদ আর বিবর্তবাদ সৃষ্টির কারণ নয়  ঈশ্বরের স্বাতন্ত্র‍্যই সৃষ্টির কারণ । এটাই যদি কারণ হয় তাহলে কাশ্মীর শৈব দর্শনের ফন্ডিত ড়োহিঠ মহাশয় কি লিখলেন এনার তো দেখি গণেশে গলদ ! আর মূর্খকে বলতে চাই পরিণামবাদ আর আভাসবাদ সেইম নাকি? আগে বেসিক ঠিক করে আসেন। 

ফন্ডিত ফ্রবু কে বলবো ভাইজান আপনারা আগে ঠিক করেন যে আপনারা পরিণামবাদী নাকি স্বাতন্ত্র‍্য (স্বভাব) বাদী। স্বাতন্ত্র‍্যশক্তিবলে ঈশ্বর সমস্তই সৃষ্টি করেন- এ সৃষ্টি না আভাস না পরিণাম- শৈবাচার্য্যগণের আভাস আর আদি শঙ্কর এর ভ্রম এক বিষয়।- শুধু সৃষ্টির অস্তিত্ব স্বরূপ বিষয়ক মতভেদ আছে। জীব তদীয় আভাসরূপ অজ্ঞান জন্য মনে হয়, কিন্তু এ সৃষ্টি মূলত আভাস নয়। – কারণ আভাস হলে সর্বং খলু ইদং ব্রহ্ম ইত্যাদি শ্রুতিবাক্য প্রয়োগের সার্থকতা ব্যর্থ হয়। আপনি নিজ আচার্য্যকেই উত্তেজনাবশতঃ খন্ডন করে ফেলেছেন - ফ্রবু, আপনার অপরিমেয় বিজনেস পলিসির জ্ঞান- ভুগিচুগি বুঝিয়ে যজ্ঞিবাসুদেবের মত সদগুরু সাজার ধান্দা আমরাও বুঝি। সবাইকে বেক্কল মনে করবেন না। আর সাথে দিয়ে এটাও বলি আপনারা গোপীনাথ কবিরাজের স্নেহভাজন ছাত্র দেবব্রত সেনশর্মার বই ঘাটবেন না। কারণ ঐ স্তরের লেখা বুঝার মতন জ্ঞান আপনার উর্বর গোবর মস্তিস্কে ধরবে না। 

ভাস্কর রায় হলেন মূলত অদ্বৈতবাদের সমর্থক। উনি তো অদ্বৈতবাদীই। আচার্য্য ভাস্কর- সম্পূর্ণ প্রকারেই অদ্বৈতমতকে পোষণ তার স্বীয় লেখায় করে এসেছেন- এ সকল স্কলারদের মতামত। শক্তি উনার উপাস্য।

আর এখানে শাক্তপরম্পরায় শৈব পরম্পরার সমন্বয় করার ষড়যন্ত্র কেন করছেন? সমস্যা হল আপনি বিরিয়াণী খাওয়ার লোক নন, খিচুড়ী খেয়ে এখন সর্বত্র কৃশরান্নরূপ ব্রহ্ম দর্শন হচ্ছে। মোটা দাগে মোটা মাথায় যা বুঝেন আর কি! 

পদ্মবিভূষণ ডি.লিট সর্বতন্ত্রস্বতন্ত্র মহাচার্য মহামহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজের তন্ত্রতত্ত্বে এ নিয়ে স্পষ্টত বিদ্যমান। শ্রী চণ্ডীর গুপ্তবোধীনি টীকা করেছেন যে ভাস্কর রায় সে শাক্ত। শৈব নন। তাহলে খিচুড়ীটা কে? আপনারা নাকি আমরা? আপনি কি ভাস্করকে মানবেন নাকি উৎপল কে? কাশ্মীরি শৈবাগম নাকি শাক্তাগম? কোনটা মানবেন? বোধহয় ভাস্কর ভট্ট এবং ভাস্কর রায় গুলিয়ে ফেলেছেন। আর ব্রহ্ম পরিণামবাদ আর বিবর্তবাদের ঠিক কী পার্থক্য যদি একটু বোঝাতেন!



  আচার্য ভাস্কর-রায়-প্রণীত ‘বরিবস্যারহসাম্'-গ্রন্থের 'প্রকাশ'-ব্যাখ্যায় ধর্মী ও ধর্ম, – শক্তিমান ও শক্তির অভিন্নতাপ্রতিপাদক বিচারশৈলীর কথা মনে পড়ে। 


‘কথমিব তস্মিন্‌জ্ঞাতে সর্বং বিজ্ঞাতমুচাতে'— এই প্রতিজ্ঞার ভাষ্যে ভাস্কর-রায় বলেছেন : “অত একৈক বিজ্ঞানেন সর্ববিজ্ঞানং শ্রুতাবুক্তং কথং সঙ্গচ্ছত ইতি সাশ্চর্যমাহ – কথমেতি। 


অথবা বিবর্তবাদং বেদান্তিসম্মতং পরিণামবাদী তান্ত্রিকে। দূষয়তি—কথমেবেতি।...অত্রেয়ং তান্ত্রিক প্রক্রিয়া—'ইচ্ছামি', 'জানামি' ইত্যাদাবুত্তম- পুরুষান্তভাসমানং স্ফুরণাদ্বীয় জ্ঞানমের প্রকাশাভিধং ব্রহ্ম। তচ্চ সর্বজ্ঞসর্বেশ্বরত্বসর্ব- কর্তৃত্বপূর্ণত্বব্যাপকত্বাদিশক্তিসংবলিতম্। 

তস্য চানন্দর পাংশ্চ এব স্ফুরণং পরাহস্তা বিমর্শ: পরা ললিতা-ভট্টারিক৷ ত্রিপুরসুন্দরীত৷দিপদৈর্ব্যবহ্রিয়তে।... 'বাচারগুণং বিকার:’ ( ছান্দোগ্য-উপনিষৎ ৬/১/৪ ) ইত্যাদিশ্রুতীনাং তত্রৈব দ্বারস্যাচ্চ। শক্তি- শক্তিমতোর পাদানো পাদেয়য়োরত্যশুমভেদং, ন পুনরোপনিষদাদিবদ্ভেদাভেদৌ অতএব 'সর্বং খৰিদৎ ব্ৰহ্ম' (ছাঃ উঃ ৩/১/৪/১) ইতি সামানাধিকরণামভেদে, ন তন্ত্রে তত্ত্ব ও সাধনা পুনবাধাপ্পাম্। অদ্বৈতশ্রুঃয়ঃ সর্বা অপ্যেতদভিপ্রায়িকা এবাৰিষুদ্ধাঃ। সর্বপ্রমাণ- মূর্ধনাহ্মাতা তদনুসরিতয়ৈশ্চাদ্বৈতে কথিতে তদ্বিরুদ্ধত্বেন ভাসমানঃ কার্যকারণয়ো- ভেদাংশ এব কম্পিত আস্তাং ন পুনঃ সর্বোঽপি প্রপঞ্চঃ।... ততষ্কশ্রুতেরপি পরিণামবাদ এর সংমতঃ সিধ্যত। ভগবতা ব্যাসেনাপি 'প্রকৃতিশ্চ প্রতিজ্ঞাদৃষ্টান্তানুপরোধাৎ' (ব্রহ্মসূত্র ১/৪/১৩) ইত্যাস্মিন্নাধিকরণে একবিজ্ঞানেন সর্ববিজ্ঞান প্রতিজ্ঞা মৃদ্ধটনখনকৃত্তনাদিদৃষ্টান্তম্ 'বহুস্যাং প্রজায়েয়' (তৈঃ উপঃ ২/৭ ) ইতাভিধ্যোপদেশা- দিকং চানুসন্ধানেন পরিণামবাদ এবাভিমতে...। ভাষ্যকারেরপি তন্ত্র বিবর্তবানুসারেণ ব্যাচক্ষাণৈরপি সৌন্দর্যলহর্যাম্ ‘অনাং ব্যোম্ ত্বম্' ইতি শ্লোকে 'জ্বয়ি পরিণতায়াম্ ইতি স্বাভিমতঃ পরিণামবাদ এব স্ফুটীকৃতঃ।'' 


এখানে দেখা যায়, আচার্য ভাস্কর-রায় দার্শনিক অপ্পয়দীক্ষিতের মতের অনুসারী হ'য়ে বিবর্তবাদের প্রসঙ্গে সৃষ্টিশ্রুতিকে পরিণামবাদের পক্ষে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পণ্ডিত কৃষ্ণস্বামী শাস্ত্রী 'বরিবস্যারহস্য’ গ্রন্থের মুখবন্ধে বলেছেন : "** respectively Dharma and Dharmin. The form Dharma is divided itself into male and female. The female form is the consort (Devi) of the Supreme Śiva (Dharmin). The male form viz Vishnu became the meterial (Upādāna ) cause of the universe এ'প্রসঙ্গে পণ্ডিত কৃষ্ণস্বামী শাস্ত্রী মন্তব্য ক'রে পুনরায় বলেছেন যে, ভাস্কর-বায় পরিপূর্ণভাবে অদ্বৈতমতেরই সমর্থক, কিন্তু অনেকে তাঁকে পরিণামবাদী তান্ত্রিক মতানুযায়ী ব'লে ব্যাখ্যা করেন: “Yet in the face of this direct testimony, it is strange to find that a view prevails that Bhaskararāya's attitude toward the Advaitavāda was no altogether sympathetic" এজন্য শাস্ত্রী মহাশয় অদ্বৈতবাদের পক্ষে তিনটি যুক্তির মধ্যে তৃতীয় যুক্তিতে বলেছেন, আচার্য শঙ্কর স্বয়ং ২/১/১৪ ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যে প্রথমে পরিণামবাদ ও পরে বিবর্ত্তবাদের দিগদর্শন করেছেন। ঠিক তেমনইভাবে সংক্ষেপশারীরকার সর্বজ্ঞাত্মমুনির উদাহরণ দিয়ে তিনি পুনরায় বলেছেন: "Categorically declares that in the Vedānta system the Pariņāma-vāda is but the necessary stepping stone, which naturally leads to the central doctrine of Advaitavada." 


সৌন্দর্য্যলহরীর টীকায় শ্রীমান  লক্ষীধর আগম পঞ্চক যে স্বীকার করেছেন সেখানে শৈবাগমের কমিকাদি আটাশটি আগমের স্বীকৃতি কোথায়? আনন্দগিরি ও লক্ষ্মীধর কোথায় বলেছেন যে শিবশক্তির অভেদত্বই প্রকৃতপক্ষে অদ্বৈতবাদ? সৌন্দর্য্যলহরীর টীকার কোনস্থানে? 


শৈবাগমে বা বহুবিধ বঙ্গদেশীয় তন্ত্রে আভাসবাদ স্বীকৃত কিন্তু শ্রদ্ধেয় ভাষ্যকার রাঘব ভট্ট অনেক সময় বিবর্তবাদের আশ্রয় নিয়ে তন্ত্রের তত্ত্বের ব্যাখ্যা করেছেন। পন্ডিত আচার্য্য ভাস্কর রায়ও বরিবস্যা প্রকাশ গ্রন্থে বিবর্তবাদের আশ্রয় নিয়ে বহু তন্ত্র তত্ত্বের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তো ভাই আপনার সাথে তো উনাদের মতের বা কথাবার্তার তো কোন মিলই নাই। এরা তো সমন্বয়বাদী এরা বিবর্ত এবং পরিণাম উভয়ই স্বীকার করে এমন একটা বিষয়। ভাস্কর মহাশয় বিবর্তকে মূলাবিকৃত পরিণামবাদ বলতে চেয়েছেন। উনারা আসলে ব্রহ্মপরিণামবাদের মোড়কে বিবর্তবাদকেই প্রচার করেছেন। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য। 


প্রসঙ্গত শৈব ভাস্কর ভট্ট এবং শাক্ত ভাস্কর রায় এক নন।


আপনাদের মনে রাখা উচিত যে শিবাদ্বৈতবাদ রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদেরই অনুরূপ। রামানুজাচার্য্য সালোক্য ও সামীপ্য আর শৈবরা সাযুজ্য মানে। এটাই পার্থক্য। এদের Terminology diffrent হতে পারে কিন্তু background ব্যাখ্যা  structure  পুরোপুরি একই। অর্থাৎ অদ্বৈতবাদের আড়ালে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদই চালাচ্ছেন। অদ্বৈতবেদান্তের বহু আগে থেকেই ত্রিক দর্শনের প্রচার প্রসার এর প্রমাণ কি ? দয়া করে বসুগুপ্ত শঙ্করের আগে তা বলবেন না। (হাসির ব্যাপার হল শঙ্করের পূর্বে কেউ অদ্বৈতবাদ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলেন নি। আদিগুরু অদ্বৈতবাদের প্রসারের পর বসুগুপ্ত নন-ডুয়ালিস্টিক এই শৈব দর্শনের ধারণার প্রচারণা শিব সূত্র দ্বারা ও স্পন্দকারিকা দিয়ে নিয়ে আসেন- অর্থাৎ কিনা টুকলির জন্য আদিগুরুকে মানতেই হয়। আদিগুরু ঐতিহাসিকভাবে বসুগুপ্তের পূর্বে এ ইতিহাস সিদ্ধ)

ভেদ, অভেদ এবং ভেদাভেদবিশিষ্ট আগমের প্রকাশক সদাশিব। তা আপনারা কোন সাইডের আগম মানছেন?  

শ্রীপতি পন্ডিত আরাধ্যের শ্রীকর ভাষ্য যে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী তা কি এই মর্কট মূর্খ জিন্সের প্যান্ট পড়া শৈবাচার্য্য জানে না? বেক্কল কি কাশ্মীর শৈব আর বীর শৈব এক করে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছে?  



আপনাদের কাছে আমার কিছু সম্পূরক প্রশ্নঃ 

ISSGT এর মুল আচার্য্য পরম্পরা কি? 

আপনারা কী শাক্ত না শৈব পরম্পরা? 

ভাস্কররায়ের মূলাবিকৃতপরিণামবাদ ও উৎপলদেবের আভাসবাদ কী একই? পরম্পরাও কী একই?

ভেদ, অভেদ, ভেদাভেদ বিশিষ্ট আগমের স্বপ্রকাশ সদাশিব। তা আপনারা কোন সাইডের আগম মানছেন?

শ্রীপতি পন্ডিত আরাধ্যের শ্রীকর ভাষ্য যে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী আর কাশ্মীর শৈব দর্শন কি এক আপনার কাছে? 

মোদ্দা কথা হল আপনারা নিজেরাই খিচুড়ীবাদি আপনারা জোড়াতালি দিয়ে ভন্ডামি করছেন আর মানুষকে বোকা বানিয়ে ধান্দাবাজি শুরু করেছেন। নিজেরা আচার্য্য সেজে ব্যাবসা আর হিন্দু সমাজের ঘাড়ে কাঁঠাল ভেঙ্গে নিজেদের প্রতিপত্তি বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আগের নিজের গোড়া ঠিক করেন এরপর আপনার সাথে নির্গুণ আর নির্বিকার নিয়ে আলোচনা করা যাবে। যার গোড়া ঠিক নাই তাঁর সাথে কিসের আলোচনা আর কিসের লাইভ? কারণ গোড়ার উচ্ছেদ হলেই সমস্ত কিছুর উচ্ছেদ হয়। 

নিজেদের আচার্য্যের কথা আপনারা কিছু বুঝেন নি আর ধার করা বক্তব্যে জোর করে শৈববাদের নামে জগার খিচুড়ী চালাচ্ছে আর আদিগুরুকে অযথাই আপনারা অপমান করছেন। যদিও এ সূর্য্যে থুতু ছিটানোর মত। আদি গুরু আকাশ সমেত সূর্য্য - আপনাদের শিব-শক্তি সঙ্গমাবস্থার সাক্ষাৎ অবতার। কোথায় কী বলবেন না বলবেন বুঝে বলবেন।


দ্বৈতবাদীদের জন্য - শিব (সোম ) থেকেই নারায়নের সৃষ্টি

আমার এই লেখাটা ঐসব মধ্যযুগীয় বিভেদকামী বৈষ্ণবদের জন্য , যারা মনে করে নারায়ণ , গোবিন্দ, কৃষ্ণ বড় আর পরমেশ্বর শিব ছোট। অদ্বৈতবাদীদের জ্ঞ্যাতার...

Popular Posts