মান্ধাত্রী বা মান্ধাতা , হিন্দু পুরাণে, একজন ইক্ষ্বাকু রাজবংশের রাজা এবং যুবানাশ্বের পুত্র ছিলেন।[1] তিনি যাদব রাজা শশবিন্দুর কন্যা এবং চিত্ররথের নাতনী বিন্দুমতি চৈত্ররথিকে বিয়ে করেছিলেন। পুরাণ অনুসারে, তার তিন পুত্র ছিল, পুরুকুৎস, অম্বরীষা এবং মুচুকুন্দ। তিনি তার উদারতা এবং উদারতার জন্য সুপরিচিত।
ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের 134 নম্বর স্তোত্রটি তাঁর জন্য দায়ী।
মহাভারত অনুসারে, তিনি ছিলেন সূর্যবংশ রাজা যুবাংশ্বের পুত্র।
আমরা পুরণো আমলের কোন জিনিসের উপমা দিতে ‘মান্ধাতার আমল’ কথাটা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কে এই মান্ধাতা? কেনইবা তার আমল ইতিহাসে এত উল্লেখযোগ্য? হিন্দুধর্মের ‘বিষ্ণুপুরাণে’ মান্ধাতার কাহিনি পাওয়া যায়। মান্ধাতা ছিলেন সূর্য বংশের একজন রাজা যার জন্ম মাতৃগর্ভে না হয়ে পিতৃগর্ভে হয়েছিল। উল্লেখ্য, এ বংশেই মান্ধাতার বহুকাল পরে রামের জন্ম হয়েছিল। কৃত্তিবাসের রামায়ণে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আছে।
মান্ধাতার পিতার নাম ছিল যুবনাশ্ব। সূর্য বংশের এ রাজার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। সন্তান লাভের আশায় সব চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তিনি মুনিদের আশ্রমে যোগ সাধনা শুরু করেন। মুনিরা যুবনাশ্বের সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তার পুত্র সন্তান উৎপাদনের জন্য এক যজ্ঞ আরম্ভ করেন। যজ্ঞ শেষ হতে রাত গভীর হয়ে গেল। এ সময় মুনিরা একটি কলসি ভর্তি পানিতে মন্ত্র পড়ে ঘুমাতে যান। এই কলসির পানি পান করলে যুবনাশ্বের স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তানের জন্ম হবে।কিন্তু যুবনাশ্ব রাতের বেলা পিপাসায় কাতর হয়ে নিজেই কলসির পানি পান করে ফেলেন। সকালে মুনিরা ঘুম থেকে জেগে পানি পানের ঘটনা শুনে ঘোষণা করলেন - পানি যেহেতু যুবনাশ্ব পান করেছে, সন্তান তার গর্ভেই জন্মাবে। গর্ভধারণের কষ্টের কথা ভেবে ভয় পেয়ে গেলেন যুবনাশ্ব। মুনিরা তাকে গর্ভধারণের কষ্ট থেকে রেহাই দিলেন। একশ বছর পর তার পেটের বাম পার্শ্ব ভেদ করে জন্ম নিলেন মান্ধাতা। কিন্তু পিতৃ-গর্ভে জন্মানো শিশুর জন্য দুধ যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন দেবরাজ ইন্দ্র তার মুখে নিজের তর্জনী দিয়ে বলেছিলেন, 'মামধাস্ততি'-সংস্কৃত এই শব্দের মানে 'আমাকে পান করো।'মাম এবং ধাতা-এই শব্দবন্ধের মিলনই পরে ফোনলজিক্যাল সূত্রে মান্ধাতা নামে উচ্চারণ করা হতে থাকে। এখান থেকেই রাজা মান্ধাতার নামকরণ হয়েছিল।বড় হয়ে মান্ধাতা বাবার রাজ্যের রাজা হলেন। এবার তিনি পৃথিবী জয়ে বেরিয়ে পড়লেন। সুমেরু পর্বতে রাক্ষসরাজ রাবণের সাথে তার তুমুল যুদ্ধ হলো। উভয়ের শক্তি সমান হওয়ায় কেউই পরাজিত হলেন না। হয়ে গেল তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব। এরপরে মান্ধাতা স্বর্গরাজ্য জয়ে বের হলে ইন্দ্র তাকে সারা পৃথিবী জয়ের পর স্বর্গরাজ্য জয় করার চেষ্টা করতে বলেন। কারণ মধুর পুত্র লবণাসুর তখনো তার অধীনতা মেনে নেয়নি। এবারে যুদ্ধ হলো লবণের সাথে। কিন্তু মান্ধাতা আর পারলেন না। নিহত হলেন তার হাতে।
কখন ছিল মান্ধাতার এ আমলটা? হিন্দুধর্ম মতে, মহাকাল (সময়কাল/যুগ) সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগে বিভক্ত। এদের মধ্যে সত্য যুগটা শ্রেষ্ঠ যুগ। সে যুগে কোন পাপ ছিলনা। মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন। সে যুগের রাজা ছিলেন মান্ধাতা। তার আমলটা ছিল হয়তো এখন থেকে লক্ষ লক্ষ বছর আগে। কারণ সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সময়কাল ছিল যথাক্রমে ১৭,২৮,০০০ বছর, ১২,৯৬,০০০ বছর এবং ৮,৬৪,০০০ বছর। আর আমরা যে পাপের যুগে (কলি কাল) বাস করছি তার দৈর্ঘ্য ৪,৩২,০০০ বছর। বোঝা যাচ্ছে, মান্ধাতার আমলটা অনেক প্রাচীন। সুতরাং এজন্যই প্রাচীন বা পুরণো জিনিস বুঝাতে ‘মান্ধাতার আমল’ কথাটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বাংলা ভাষায় অনেক আগের কোন সময় বোঝাতে বিভিন্ন রাজা বা নবাবদের আমল অনেকেই বলে থাকেন। তবে পৌরাণিক কাহিনী হলেও মান্ধাতার আমলের চেয়ে পুরনো কোন আমল বাংলা ভাষায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।