যারা ত্রিক দর্শন নিয়ে সামান্য পড়াশোনা করেছেন এরা জানেন যে পরিণামবাদ আর বিবর্তবাদ সৃষ্টির কারণ নয় ঈশ্বরের স্বাতন্ত্র্যই সৃষ্টির কারণ । এটাই যদি কারণ হয় তাহলে কাশ্মীর শৈব দর্শনের ফন্ডিত ড়োহিঠ মহাশয় কি লিখলেন এনার তো দেখি গণেশে গলদ ! আর মূর্খকে বলতে চাই পরিণামবাদ আর আভাসবাদ সেইম নাকি? আগে বেসিক ঠিক করে আসেন।
ফন্ডিত ফ্রবু কে বলবো ভাইজান আপনারা আগে ঠিক করেন যে আপনারা পরিণামবাদী নাকি স্বাতন্ত্র্য (স্বভাব) বাদী। স্বাতন্ত্র্যশক্তিবলে ঈশ্বর সমস্তই সৃষ্টি করেন- এ সৃষ্টি না আভাস না পরিণাম- শৈবাচার্য্যগণের আভাস আর আদি শঙ্কর এর ভ্রম এক বিষয়।- শুধু সৃষ্টির অস্তিত্ব স্বরূপ বিষয়ক মতভেদ আছে। জীব তদীয় আভাসরূপ অজ্ঞান জন্য মনে হয়, কিন্তু এ সৃষ্টি মূলত আভাস নয়। – কারণ আভাস হলে সর্বং খলু ইদং ব্রহ্ম ইত্যাদি শ্রুতিবাক্য প্রয়োগের সার্থকতা ব্যর্থ হয়। আপনি নিজ আচার্য্যকেই উত্তেজনাবশতঃ খন্ডন করে ফেলেছেন - ফ্রবু, আপনার অপরিমেয় বিজনেস পলিসির জ্ঞান- ভুগিচুগি বুঝিয়ে যজ্ঞিবাসুদেবের মত সদগুরু সাজার ধান্দা আমরাও বুঝি। সবাইকে বেক্কল মনে করবেন না। আর সাথে দিয়ে এটাও বলি আপনারা গোপীনাথ কবিরাজের স্নেহভাজন ছাত্র দেবব্রত সেনশর্মার বই ঘাটবেন না। কারণ ঐ স্তরের লেখা বুঝার মতন জ্ঞান আপনার উর্বর গোবর মস্তিস্কে ধরবে না।
ভাস্কর রায় হলেন মূলত অদ্বৈতবাদের সমর্থক। উনি তো অদ্বৈতবাদীই। আচার্য্য ভাস্কর- সম্পূর্ণ প্রকারেই অদ্বৈতমতকে পোষণ তার স্বীয় লেখায় করে এসেছেন- এ সকল স্কলারদের মতামত। শক্তি উনার উপাস্য।
আর এখানে শাক্তপরম্পরায় শৈব পরম্পরার সমন্বয় করার ষড়যন্ত্র কেন করছেন? সমস্যা হল আপনি বিরিয়াণী খাওয়ার লোক নন, খিচুড়ী খেয়ে এখন সর্বত্র কৃশরান্নরূপ ব্রহ্ম দর্শন হচ্ছে। মোটা দাগে মোটা মাথায় যা বুঝেন আর কি!
পদ্মবিভূষণ ডি.লিট সর্বতন্ত্রস্বতন্ত্র মহাচার্য মহামহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজের তন্ত্রতত্ত্বে এ নিয়ে স্পষ্টত বিদ্যমান। শ্রী চণ্ডীর গুপ্তবোধীনি টীকা করেছেন যে ভাস্কর রায় সে শাক্ত। শৈব নন। তাহলে খিচুড়ীটা কে? আপনারা নাকি আমরা? আপনি কি ভাস্করকে মানবেন নাকি উৎপল কে? কাশ্মীরি শৈবাগম নাকি শাক্তাগম? কোনটা মানবেন? বোধহয় ভাস্কর ভট্ট এবং ভাস্কর রায় গুলিয়ে ফেলেছেন। আর ব্রহ্ম পরিণামবাদ আর বিবর্তবাদের ঠিক কী পার্থক্য যদি একটু বোঝাতেন!
আচার্য ভাস্কর-রায়-প্রণীত ‘বরিবস্যারহসাম্'-গ্রন্থের 'প্রকাশ'-ব্যাখ্যায় ধর্মী ও ধর্ম, – শক্তিমান ও শক্তির অভিন্নতাপ্রতিপাদক বিচারশৈলীর কথা মনে পড়ে।
‘কথমিব তস্মিন্জ্ঞাতে সর্বং বিজ্ঞাতমুচাতে'— এই প্রতিজ্ঞার ভাষ্যে ভাস্কর-রায় বলেছেন : “অত একৈক বিজ্ঞানেন সর্ববিজ্ঞানং শ্রুতাবুক্তং কথং সঙ্গচ্ছত ইতি সাশ্চর্যমাহ – কথমেতি।
অথবা বিবর্তবাদং বেদান্তিসম্মতং পরিণামবাদী তান্ত্রিকে। দূষয়তি—কথমেবেতি।...অত্রেয়ং তান্ত্রিক প্রক্রিয়া—'ইচ্ছামি', 'জানামি' ইত্যাদাবুত্তম- পুরুষান্তভাসমানং স্ফুরণাদ্বীয় জ্ঞানমের প্রকাশাভিধং ব্রহ্ম। তচ্চ সর্বজ্ঞসর্বেশ্বরত্বসর্ব- কর্তৃত্বপূর্ণত্বব্যাপকত্বাদিশক্তিসংবলিতম্।
তস্য চানন্দর পাংশ্চ এব স্ফুরণং পরাহস্তা বিমর্শ: পরা ললিতা-ভট্টারিক৷ ত্রিপুরসুন্দরীত৷দিপদৈর্ব্যবহ্রিয়তে।... 'বাচারগুণং বিকার:’ ( ছান্দোগ্য-উপনিষৎ ৬/১/৪ ) ইত্যাদিশ্রুতীনাং তত্রৈব দ্বারস্যাচ্চ। শক্তি- শক্তিমতোর পাদানো পাদেয়য়োরত্যশুমভেদং, ন পুনরোপনিষদাদিবদ্ভেদাভেদৌ অতএব 'সর্বং খৰিদৎ ব্ৰহ্ম' (ছাঃ উঃ ৩/১/৪/১) ইতি সামানাধিকরণামভেদে, ন তন্ত্রে তত্ত্ব ও সাধনা পুনবাধাপ্পাম্। অদ্বৈতশ্রুঃয়ঃ সর্বা অপ্যেতদভিপ্রায়িকা এবাৰিষুদ্ধাঃ। সর্বপ্রমাণ- মূর্ধনাহ্মাতা তদনুসরিতয়ৈশ্চাদ্বৈতে কথিতে তদ্বিরুদ্ধত্বেন ভাসমানঃ কার্যকারণয়ো- ভেদাংশ এব কম্পিত আস্তাং ন পুনঃ সর্বোঽপি প্রপঞ্চঃ।... ততষ্কশ্রুতেরপি পরিণামবাদ এর সংমতঃ সিধ্যত। ভগবতা ব্যাসেনাপি 'প্রকৃতিশ্চ প্রতিজ্ঞাদৃষ্টান্তানুপরোধাৎ' (ব্রহ্মসূত্র ১/৪/১৩) ইত্যাস্মিন্নাধিকরণে একবিজ্ঞানেন সর্ববিজ্ঞান প্রতিজ্ঞা মৃদ্ধটনখনকৃত্তনাদিদৃষ্টান্তম্ 'বহুস্যাং প্রজায়েয়' (তৈঃ উপঃ ২/৭ ) ইতাভিধ্যোপদেশা- দিকং চানুসন্ধানেন পরিণামবাদ এবাভিমতে...। ভাষ্যকারেরপি তন্ত্র বিবর্তবানুসারেণ ব্যাচক্ষাণৈরপি সৌন্দর্যলহর্যাম্ ‘অনাং ব্যোম্ ত্বম্' ইতি শ্লোকে 'জ্বয়ি পরিণতায়াম্ ইতি স্বাভিমতঃ পরিণামবাদ এব স্ফুটীকৃতঃ।''
এখানে দেখা যায়, আচার্য ভাস্কর-রায় দার্শনিক অপ্পয়দীক্ষিতের মতের অনুসারী হ'য়ে বিবর্তবাদের প্রসঙ্গে সৃষ্টিশ্রুতিকে পরিণামবাদের পক্ষে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পণ্ডিত কৃষ্ণস্বামী শাস্ত্রী 'বরিবস্যারহস্য’ গ্রন্থের মুখবন্ধে বলেছেন : "** respectively Dharma and Dharmin. The form Dharma is divided itself into male and female. The female form is the consort (Devi) of the Supreme Śiva (Dharmin). The male form viz Vishnu became the meterial (Upādāna ) cause of the universe এ'প্রসঙ্গে পণ্ডিত কৃষ্ণস্বামী শাস্ত্রী মন্তব্য ক'রে পুনরায় বলেছেন যে, ভাস্কর-বায় পরিপূর্ণভাবে অদ্বৈতমতেরই সমর্থক, কিন্তু অনেকে তাঁকে পরিণামবাদী তান্ত্রিক মতানুযায়ী ব'লে ব্যাখ্যা করেন: “Yet in the face of this direct testimony, it is strange to find that a view prevails that Bhaskararāya's attitude toward the Advaitavāda was no altogether sympathetic" এজন্য শাস্ত্রী মহাশয় অদ্বৈতবাদের পক্ষে তিনটি যুক্তির মধ্যে তৃতীয় যুক্তিতে বলেছেন, আচার্য শঙ্কর স্বয়ং ২/১/১৪ ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যে প্রথমে পরিণামবাদ ও পরে বিবর্ত্তবাদের দিগদর্শন করেছেন। ঠিক তেমনইভাবে সংক্ষেপশারীরকার সর্বজ্ঞাত্মমুনির উদাহরণ দিয়ে তিনি পুনরায় বলেছেন: "Categorically declares that in the Vedānta system the Pariņāma-vāda is but the necessary stepping stone, which naturally leads to the central doctrine of Advaitavada."
সৌন্দর্য্যলহরীর টীকায় শ্রীমান লক্ষীধর আগম পঞ্চক যে স্বীকার করেছেন সেখানে শৈবাগমের কমিকাদি আটাশটি আগমের স্বীকৃতি কোথায়? আনন্দগিরি ও লক্ষ্মীধর কোথায় বলেছেন যে শিবশক্তির অভেদত্বই প্রকৃতপক্ষে অদ্বৈতবাদ? সৌন্দর্য্যলহরীর টীকার কোনস্থানে?
শৈবাগমে বা বহুবিধ বঙ্গদেশীয় তন্ত্রে আভাসবাদ স্বীকৃত কিন্তু শ্রদ্ধেয় ভাষ্যকার রাঘব ভট্ট অনেক সময় বিবর্তবাদের আশ্রয় নিয়ে তন্ত্রের তত্ত্বের ব্যাখ্যা করেছেন। পন্ডিত আচার্য্য ভাস্কর রায়ও বরিবস্যা প্রকাশ গ্রন্থে বিবর্তবাদের আশ্রয় নিয়ে বহু তন্ত্র তত্ত্বের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তো ভাই আপনার সাথে তো উনাদের মতের বা কথাবার্তার তো কোন মিলই নাই। এরা তো সমন্বয়বাদী এরা বিবর্ত এবং পরিণাম উভয়ই স্বীকার করে এমন একটা বিষয়। ভাস্কর মহাশয় বিবর্তকে মূলাবিকৃত পরিণামবাদ বলতে চেয়েছেন। উনারা আসলে ব্রহ্মপরিণামবাদের মোড়কে বিবর্তবাদকেই প্রচার করেছেন। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।
প্রসঙ্গত শৈব ভাস্কর ভট্ট এবং শাক্ত ভাস্কর রায় এক নন।
আপনাদের মনে রাখা উচিত যে শিবাদ্বৈতবাদ রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদেরই অনুরূপ। রামানুজাচার্য্য সালোক্য ও সামীপ্য আর শৈবরা সাযুজ্য মানে। এটাই পার্থক্য। এদের Terminology diffrent হতে পারে কিন্তু background ব্যাখ্যা structure পুরোপুরি একই। অর্থাৎ অদ্বৈতবাদের আড়ালে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদই চালাচ্ছেন। অদ্বৈতবেদান্তের বহু আগে থেকেই ত্রিক দর্শনের প্রচার প্রসার এর প্রমাণ কি ? দয়া করে বসুগুপ্ত শঙ্করের আগে তা বলবেন না। (হাসির ব্যাপার হল শঙ্করের পূর্বে কেউ অদ্বৈতবাদ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলেন নি। আদিগুরু অদ্বৈতবাদের প্রসারের পর বসুগুপ্ত নন-ডুয়ালিস্টিক এই শৈব দর্শনের ধারণার প্রচারণা শিব সূত্র দ্বারা ও স্পন্দকারিকা দিয়ে নিয়ে আসেন- অর্থাৎ কিনা টুকলির জন্য আদিগুরুকে মানতেই হয়। আদিগুরু ঐতিহাসিকভাবে বসুগুপ্তের পূর্বে এ ইতিহাস সিদ্ধ)
ভেদ, অভেদ এবং ভেদাভেদবিশিষ্ট আগমের প্রকাশক সদাশিব। তা আপনারা কোন সাইডের আগম মানছেন?
শ্রীপতি পন্ডিত আরাধ্যের শ্রীকর ভাষ্য যে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী তা কি এই মর্কট মূর্খ জিন্সের প্যান্ট পড়া শৈবাচার্য্য জানে না? বেক্কল কি কাশ্মীর শৈব আর বীর শৈব এক করে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছে?
আপনাদের কাছে আমার কিছু সম্পূরক প্রশ্নঃ
ISSGT এর মুল আচার্য্য পরম্পরা কি?
আপনারা কী শাক্ত না শৈব পরম্পরা?
ভাস্কররায়ের মূলাবিকৃতপরিণামবাদ ও উৎপলদেবের আভাসবাদ কী একই? পরম্পরাও কী একই?
ভেদ, অভেদ, ভেদাভেদ বিশিষ্ট আগমের স্বপ্রকাশ সদাশিব। তা আপনারা কোন সাইডের আগম মানছেন?
শ্রীপতি পন্ডিত আরাধ্যের শ্রীকর ভাষ্য যে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী আর কাশ্মীর শৈব দর্শন কি এক আপনার কাছে?
মোদ্দা কথা হল আপনারা নিজেরাই খিচুড়ীবাদি আপনারা জোড়াতালি দিয়ে ভন্ডামি করছেন আর মানুষকে বোকা বানিয়ে ধান্দাবাজি শুরু করেছেন। নিজেরা আচার্য্য সেজে ব্যাবসা আর হিন্দু সমাজের ঘাড়ে কাঁঠাল ভেঙ্গে নিজেদের প্রতিপত্তি বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আগের নিজের গোড়া ঠিক করেন এরপর আপনার সাথে নির্গুণ আর নির্বিকার নিয়ে আলোচনা করা যাবে। যার গোড়া ঠিক নাই তাঁর সাথে কিসের আলোচনা আর কিসের লাইভ? কারণ গোড়ার উচ্ছেদ হলেই সমস্ত কিছুর উচ্ছেদ হয়।
নিজেদের আচার্য্যের কথা আপনারা কিছু বুঝেন নি আর ধার করা বক্তব্যে জোর করে শৈববাদের নামে জগার খিচুড়ী চালাচ্ছে আর আদিগুরুকে অযথাই আপনারা অপমান করছেন। যদিও এ সূর্য্যে থুতু ছিটানোর মত। আদি গুরু আকাশ সমেত সূর্য্য - আপনাদের শিব-শক্তি সঙ্গমাবস্থার সাক্ষাৎ অবতার। কোথায় কী বলবেন না বলবেন বুঝে বলবেন।