Tuesday, December 13, 2022

কলিসন্তরণ ও হরে কৃষ্ণ নাম নিয়ে কিছু কথা। পাল্টা যুক্তি থাকলে কমেন্ট করুন আমি ভুল হলে স্বীকার করবো এবং পোষ্ট ডিলিট দিব।

 হরেকৃষ্ণ মহা-মন্ত্রের নামে, দেখুন আপনাদের সাথে কিভাবে কৃৈষ্ণবরা প্রতারণা করেন:--- 

কৃৈষ্ণবদের যখন প্রশ্ন করা হয়, হরেকৃষ্ণ মন্ত্র আপনারা বেদের কোথায় পেয়েছেন? প্রতারক কৃৈষ্ণবরা তখন উত্তর দেন, হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র আমরা পেয়েছি কলি সন্তরণ উপনিষদে। এখন প্রশ্ন হল,কলি-সন্তরণ কি সত্যিই ঋষিকৃত উপনিষদ বা প্রাচীন উপনিষদ'গুলোর অন্তর্ভুক্ত? প্রসঙ্গটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা যাক:

গৌড়ীয় কৃৈষ্ণবদের ধর্ম-বাবা হলেন,মধ্বাচার্য।

মধ্বাচার্য হলেন,গৌড়ীয় কৃৈষ্ণবদের গুরু পরম্পরার চার নাম্বার গুরু।

( প্রভুপাদ কৃত,শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ বইয়ের,40 নং পৃষ্ঠায়,  গুরু পরম্পরার তালিকায় চার নাম্বারে মধ্বের নাম আছে।)

মধ্বাচার্য,দশটি উপনিষদের ভাষ্য করেছেন। যথা:- ঈশ,কেন,কঠ,প্রশ্ন,মুন্ডক,মান্ডূক্য, ঐতরেয়,তৈত্তিরীয়,ছান্দোগ্য ও বৃহদারণ্যক।

তাহলে,বোঝা যাচ্ছে, গৌড়ীয় কৃৈষ্ণবদের গুরু বাবা মধ্বাচার্যের সময়ে,কলি সন্তরণ উপনিষদের কোন ভাষ্য ছিল না। বা উনি করেন নাই। 

কৃৈষ্ণবদের আর একটি শাখা হল,শ্রী সম্প্রদায়।

শ্রী সম্প্রদায়ের একজন প্রখ্যাত আচার্য হলেন,রঙ্গরামানুজ।

রঙ্গরামানুজ দশটি উপনিষদের ভাষ্য করেছেন। সেখানেও,কলি সন্তরণ উপনিষদের নাম নেই। বঙ্গীয় সারস্বত গৌড়ীয় মঠ যে দশটি উপনিষদ প্রকাশ করেছেন, সেখানেও ঈশ উপনিষদের  বলদেব বিদ্যাভূষণের ভাষ্য  এবং কেন,কঠ,প্রশ্ন,মুন্ডক,মান্ডূক্য, ঐতরেয়,তৈত্তিরীয়,শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের রঙ্গরামানুজের ভাষ্য দেওয়া আছে। অর্থাৎ,কৃৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নিজেদের আচার্যরাই কলি সন্তরণ উপনিষদের অস্তিত্ব অস্বীকার করছেন না !!! 

এবার স্মৃতি শাস্ত্রের কথা বলিঃ 

  1. স্মৃতি শাস্ত্রের অন্যতম গ্রন্থ মনুস্মৃতিতে আমাদের মহামন্ত্র হিসাবে  বেদ মাতার গায়ত্রী  মন্ত্রকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। 
  2. ভাগবত গীতাতে ব্রহ্মের স্বরূপ ওঁ  মন্ত্রকে বলা হয়েছে। 
  3. বেদের সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, মুখ্য উপনিষদ সহ পরিশিষ্টে এই মন্ত্র পাওয়া যায় না । কি আজব ব্যাপার !!!!
  4.  শ্রীকৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী মহাভারত, এবং মর্যাদা পুরুষোত্তম  রাম এর জীবনী রামায়নেও এই মন্ত্র নেই !! 


এইবার মূর্খ কৃৈষ্ণবরা বলবেন যে, চৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন তিনি এই হরেকৃষ্ণ নামের প্রমাণ কলি সন্তরণ উপনিষদ থেকে দেখিয়েছেন ও এই নামের প্রবর্তন করেছেন। 


তাহলে বলা যায়, চৈতন্য মহাপ্রভুর লিখিত কোনো বই নেই। উনার একমাত্র রচনা শিক্ষাষ্টকম । উনার ঘাড়ে বন্দুক রেখে চালনা কেন বাছা?? 


জাপান ও সনাতন সংস্কৃতি

 প্রথমেই যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হল : জাপানি শিন্তো ধর্মে ভারতীয় 'দেবতা'রা কোথা থেকে এলেন? এঁরা জাপানে এসেছেন মূলতঃ মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রসারের ফলে। বর্তমানে হিন্দু দেবতাদের পূজা হয় মূলতঃ বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের একটি ক্ষুদ্র জাপানি শাখা শিঙ্গন বৌদ্ধধর্মের বিশ্বাসীদের মধ্যে। থেরবাদী(হীনযান) বৌদ্ধ মতানুসারে, দেবতাদের অস্তিত্ব থাকতে পারে, তবে তাঁরা মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর বা বুদ্ধিমত্তা-বিশিষ্ট হবেন, এমন কোনো মানে নেই, তাই তাঁরা পূজ্য নন(এমনিতেও পার্থিব স্থূল বাসনা পূরণের উদ্দেশ্যে উপাসনা বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনের পরিপন্থী)। তবে মহাযান ও বজ্রযান মতানুসারে দেবতারা হলেন আদিবুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বগণের অধীন সত্ত্বা(একই ধারণা জৈনধর্মের তীর্থঙ্করদের 'শাসনদেবতা'দের মধ্যেও দেখা যায়)। তাঁরা মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী, অতএব পূজ্য।

জাপানি ভাষায় দেবতা শব্দটির ভাবানুবাদ 'তেনবু'। এই কারণে দেবতাদের নামের শেষে 'তেন' শব্দবন্ধটি পাওয়া যায়।


জাপানে হিন্দু দেবতারা 'সৌভাগ্যের সপ্ত দেবতা'র মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এই সাত জন দেবতা'র মধ্যে চার জন ভারতীয়, দুই জন চীনা, ও এক জন জাপানি(মতান্তরে তিন জন চীনা)। চার জন ভারতীয় সৌভাগ্যের দেবতা হলেন :

  • বেনজ়াইতেন/৺সরস্বতী :

জাপানে বুদ্ধের পরে সর্বাধিক পূজিত personified deity হলেন দেবী বেনজ়াইতেন, যাঁর সংস্কৃত নাম ভগবতী ৺সরস্বতী। জাপানে তিনি দ্বিভূজা, শ্বেতাম্বরা, নবযৌবনা, হাতে ধারণ করেন 'বিওয়া' নামক তারের বাদ্যযন্ত্র। তিনি শ্বেতনাগবাহিনী; যা কিছু বহমান, সেই সব কিছুর অধিষ্ঠাত্রী দেবী তিনি - যেমন সময়, প্রেম, জ্ঞান, গুণ, জল, শব্দ, সঙ্গীত প্রমুখ। কখনও তিনি শ্বেতপদ্মাসনা, কখনও তিনি ষড়ভূজা শস্ত্রপাণি, আবার কখনও জ্ঞানের নির্মলতাকে পরিস্ফুটিত করতে তাকে নগ্নিকা রূপেও দেখা যায়।

  • বিশামন্তেন/৺কুবের :

জাপানে ইনি সম্পদ, ন্যায় ও যুদ্ধের দেবতা। ইনি দ্বিভূজ, ভীষণ-দর্শন — এক হাতে থাকে ত্রিশূল অথবা কুঠার, অপর হাতে প্যাগোডা। ইনি শিন্তো ও বৌদ্ধ মন্দিরকে শত্রুদের থেকে রক্ষাও করে থাকেন। ন্যায়পরায়ণ ও নিয়মানুবর্তী মানুষ বিশামন্তেনের আশীর্বাদ সহজেই লাভ করে থাকেন। 'বিশামন্তেন' নামটি এসেছে ৺কুবেরের বৌদ্ধ নাম 'বৈশ্রবণ' থেকে(মহামুনি বিশ্রবার পুত্র ছিলেন কুবের, রাবণ, কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণ, এবং কন্যা ছিলেন সূর্পনখা)।

  • কিশহউতেন/৺লক্ষ্মী :

ভারতের মতই জাপানেও ভগবতী ৺লক্ষ্মী(বৌদ্ধ নাম মহাশ্রীদেবী) হলেন আনন্দ, সৌন্দর্য, উর্বরতা ও সমৃদ্ধির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ইনি দ্বিভূজা, রক্তাম্বরা, পদ্মাসনা ও নবযৌবনা, এক হাতে বরমুদ্রা, অন্য হাতে চিন্তামণি। উল্লেখ্য : যে পেচকবাহিনী দ্বিভূজা লক্ষ্মীর উপাসনা পূর্ব ভারতে প্রচলিত আছে, তাঁর রূপকল্প এসেছে পূর্ব ভারতে ৺লক্ষ্মীর প্রাচীন বৌদ্ধ রূপ দেবী বসুধারার থেকে।

  • দাইকোকুতেন/ঈশানাতেন/দাইজ়িজিতেন/৺মহাকাল/৺মহাকালী :

'দাইকোকুতেন' অর্থ হল 'ঘনকৃষ্ণ মহান/বিরাট' বা 'Great Black One' — 'মহাকাল' শব্দের অন্যতম আক্ষরিক অনুবাদ। ভগবান ৺শিবকে জাপানিরা জানেন 'দাইকোকুতেন' বা 'মাহাকারা' হিসেবে। ইনি দ্বিভূজ, এক হাতে হাতুড়ি ও অন্য হাতে ঝুলি। ইনি গার্হস্থ্য জীবন, কৃষি, উর্বরতা, যৌনতা ও যুদ্ধের দেবতা। ঈশানাতেন রূপে তাঁর কণ্ঠে থাকে নীল রঙের সাপ ও নৃমুণ্ডমাল্য - সেই রূপে তিনি ধর্মের রক্ষক ও ঈশান কোণের অধীশ্বর।

দাইকোকুতেনের ছয়টি প্রধান রূপ :

  1. বিকু দাইকোকু(মহাদেব — বিশ্বাস যে শাক্যমুনি বুদ্ধ পূর্বাবতারে মহাদেব ছিলেন) : পুরোহিত/সন্ন্যাসীরুপী, এক হাতে হাতুড়ি, অপর হাতে বজ্র-তরবারি, মঠের রক্ষাকর্তা হিসেবে পূজিত।
  2. ওইকারা দাইকোকু(শিবপুত্র ভগবান ৺কার্তিকেয়): রাজকীয় পোশাক পরিহিত, এক হাতে তরবারি, অপর হাতে বজ্র।
  3. ইয়াশা দাইকোকু : রাজকীয় পোশাক পরিহিত, হাতে ধর্মচক্র, দুষ্ট দমন করেন।
  4. মাহাকারা দাইকোকুনিয়ো(ভগবতী ৺মহাকালী) : নারী-রূপিনী, পালনকর্ত্রী, মাথায় ধানের ছড়ার গুচ্ছ।
  5. শিন্দা দাইকোকু(সম্ভবতঃ নরমুখ ৺গণপতি) : বালক-রূপী, হাতে চিন্তামণি, ভক্তের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করেন ও সৌভাগ্য দান করেন।
  6. মাকারা দাইকোকু(সর্বাধিক পরিচিত রূপ) : হাতে হাতুড়ি ও পিঠে ধানের বস্তা, বসেন ধানের গুচ্ছের উপর।

(Metropolitan Museum of Artএ সংরক্ষিত দাইকোকুতেনের ছয় রূপের ছবি)


এই প্রধান দেবতারা ছাড়াও আরও যেই সব হিন্দু দেবতারা জাপানে পূজা পান :

  • কাঙ্গিতেন(ভগবান ৺গণেশ, বৌদ্ধ নাম বিনায়ক) :

ইনি একাধারে বিঘ্নকর্তা ও বিঘ্নহর্তা। এঁর দুই রূপ — একক ও দ্বৈত। দ্বৈত রূপটি মানবজীবনে সুখ-দুঃখ ইত্যাদি বৈপরীত্যের সহাবস্থানের প্রতীক। ইনি সুখী দাম্পত্য জীবন, সৌভাগ্য ও সু-প্রজননের আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন।

  • ইদাতেন (ভগবান ৺স্কন্দ/৺কার্তিকেয়) :

মঠ-শ্রমণ-শ্রমণাদের রক্ষাকর্তা। রান্নাঘরের অধীশ্বর।

  • মারিশিতেন (৺মারীচি) :

ব্রক্ষ্মার মানস-সন্তান দশ প্রজাপতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মারীচি(অর্থ : সূর্যকিরণ)। ইনি মূলতঃ যোদ্ধা দেবতা, নারী ও পুরুষ উভয় রূপেই পূজা করা হয়।

  • সুইতেন(৺বরুণ) : পশ্চিম দিশার অধিপতি।
  • এনমাতেন(৺যম) : দক্ষিণ দিশার অধিপতি।
  • বন্তেন(৺ব্রক্ষ্মা) : ঊর্ধ্ব-দিশার অধিপতি।
  • ফুতেন(৺বায়ু) : উত্তর-পশ্চিম কোণের অধিপতি।
  • গাততেন(৺চন্দ্র)
  • জীতেন(৺পৃথিবী)
  • কাতেন(৺অগ্নি) : দক্ষিণ-পূর্ব দিশার অধিপতি।
  • নিততেন (৺সূর্য)
  • তাইশাকুতেন(৺ইন্দ্র) : পূর্ব দিশার অধিপতি।

সর্বশেষ যে দেবীর কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন চান্ডী/চুন্ডী(ভগবতী ৺চণ্ডী)।

কমলাসনের দুই পাশে দুই নাগরাজ নন্দ ও উপনন্দ সহিত দেবী চুন্ডী।

এই দেবীকে আদি বোধিসত্ত্ব বলে জ্ঞান করা হয়। ইনি আজ অবধি যত জীবাত্মা বুদ্ধত্ব লাভ করেছেন, সেই সাতশত কোটি বুদ্ধের আদি জননী। বিশ্বাস, শাক্যমুনি গৌতম বুদ্ধের বর্ণিত 'মহাচণ্ডী ধরণী' নামক স্তুতি শ্লোক পাঠ করলে জীবের সর্ব বিপদের ভয় দূর হয়। এই ত্রিনয়নী ও বহুভুজা রূপ, 'বিপত্তারিণী/দুর্গতিনাশিনী' প্রতিচ্ছবি ও পূর্বদেশীয় তান্ত্রিক ধারা হতে উৎপত্তির ইতিহাস অনুসারে বিবেচনা করলে বোঝা যায় যে ইনি ও ভারতীয় দেবী ৺চণ্ডী অভিন্ন।


এই হল জাপানে পূজিত হিন্দু দেবতা-সমূহ(অন্ততঃ আমার জানা-মতে)। তবে, ইংরেজি ক্বোরায় এক চাড্ডি-গোত্রীয় মানবরূপী ছাগসন্তানের দেওয়া postএ একবার আমি এই বিষয়ে একটা ডাহা ভুল দেখেছিলাম :

এঁকে বলা হয়েছিল দেবী ৺দুর্গা।

তবে অর্ধশিক্ষিত propagandaবাজ লোকজন যাই বলুক না কেন, প্রাচ্যীয় সভ্যতায় বহুভুজা শস্ত্রপাণি দেবীমূর্তি মাত্রই ৺দুর্গা নন।

ইনি আসলে করুণার অবতার বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের নারী-রূপ, দেবী কোয়ানয়িন(গুয়ান শি য়িন)-এর সহস্রভুজা মূর্তি(Thousand Armed Guanyin)।

ইনি আমার অন্যতম প্রিয় personified deityদের মধ্যে অন্যতম। এঁর বিষয়ে অনেক সুন্দর গল্প আছে, পরে এক দিন বলা যাবে সেই সব।

Wednesday, November 9, 2022

বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কিছু অদ্ভুত প্রাণী

 আমাদের ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত প্রাণী দিয়েই শুরু করা যাক

কামধেনু

সমুদ্রমন্থনজাত কামধেনুর কথা আমরা প্রত্যেকেই জানি। মনের কাঙ্খিত সকল বস্তু দিতে সক্ষম, বহু দিব্য ক্ষমতা সম্পন্ন এই কামধেনু। পুরাণ মতে গরু-মহিষের মত সকল দ্বিক্ষুর জাতীয় প্রাণী কামধেনুর সন্তান।

ঐরাবত

সমুদ্রমন্থন থেকে উত্থিত বিশালাকায়, প্রচন্ড শক্তিশালী, সাতশুড় যুক্ত, দিব্য সাদাহাতি হলো ঐরাবত। পুরানমতে ঐরাবত দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন।

ইচ্ছাধারী নাগ

পুরাণ এবং বিভিন্ন উপকথায় ইচ্ছাধারী নাগ-নাগিনের ছড়াছড়ি। আমরা সবাই এদের সম্বন্ধে জানি তাই আর গভীরে গেলাম না।

গরুড়

গরুড় সম্বন্ধেও আমরা সবাই জানি, মানুষ এবং ঈগলের মিশ্রিত বিশালাকায় প্রাণী গরুড়। পুরাণ মতে গরুড় পক্ষীরাজ, পাখিদের দেবতা, বিষ্ণুবাহন এবং ব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে শক্তিশালী জীব।

শরভ

শরভ পুরাণে উল্লিখিত এক অতি অদ্ভুত জীব। যার দেহ সিংহের, সিংহের ঘাড়ের ওপর কোমর পর্যন্ত মানুষের দেহ, সেই মানুষের ঘাড়ে সিংহের মাথা কিন্তু তার ঠোঁটে ঈগলের চঞ্চু এবং মাথায় হরিণের শিং। তার দুটি বিশাল ডানা, সুদীর্ঘ লেজ এবং আটটি পা।

ভগবান বিষ্ণু যখন নৃসিংহ রূপে ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠেন তখন মহাদেব এই শরভ রূপ নিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করেন।

গন্দভেরুণ্ড

পুরাণে উল্লিখিত দুই মুখযুক্ত বিশালাকায় পক্ষী, তার আকার এতটাই বড় যে একটি হাতিও তার কাছে খেলনার মতো।

কাহিনী অনুসারে মহাদেব যখন শরভ রূপে ভগবান নৃসিংহ কে পরাজিত করেন তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে গন্দভেরুণ্ড রূপে অবতীর্ণ হয়ে মহাদেবের শরভ রূপকে পরাজিত করেন।

মকর

মকর পুরাণে উল্লিখিত একটি প্রাণী যার দেহ মাছের কিন্তু মাথা হাতির মতো। পুরাণ মতে এই মকর মা গঙ্গার বাহন।

কবন্ধ

কবন্ধ রামায়ণে উল্লিখিত একটি রাক্ষস। তার মাথা এবং দুটি পা শরীরে ভেতর ঢোকানো। তার পেটে তীক্ষ্ম দাঁতযুক্ত মুখ এবং একটি বিশাল চোখ ছিলো, তার দুই হাত একশ যোজন লম্বা ছিলো। পা শরীরের ভেতর ঢুকে যাওয়ার কারণে সে চলতে পারতো না, কিন্তু তার হাত দুটো বিশাল হওয়ার কারণে তা দিয়ে বহুদুরের থেকেও শিকার ধরে আনতে পারতো।

রামায়ণের অরন্যকাণ্ডে এর উল্লেখ পাওয়া যায়, রাম এবং লক্ষণ যখন দেবী সীতার খোঁজ করছিলেন কবন্ধ তখন তাদের দুজনকে দুহাতে ধরে নেয় যার ফলে লক্ষণ তার হাত দুটো কেটে দেয়।

নবগুঞ্জরা

ওড়িয়া মহাভারতে উল্লিখিত 'ন রকম' প্রাণীর মিশ্রণ এই নবগুঞ্জরা। তার তিনটি পায়ের মধ্যে একটি হাতি, একটি ঘোড়া এবং একটি বাঘের পা, কিন্তু তার চতুর্থ পায়ের জায়গায় মানুষের হাত। তার ষাড়ের পিঠ, সিংহের কোমর, ময়ুরের গলা, মোরগের মাথা এবং তার লেজ একটি সাপ।

মহাভারত মতে একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই রূপে অর্জুনকে দর্শন দেন।



ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত জীবের বর্ণনা অনেক হলো এবার অন্যান্য পৌরাণিক জীবের সম্বন্ধে জানা যাক

মাইনটর

গ্রীক পুরাণে উল্লিখিত বিশাল প্রাণী যে মানুষ এবং ষাড়ের মিশ্রণ। এটি অত্যন্ত রগচটা প্রাণী বলে মনে করা হয়।

সেন্টর

সেন্টর গ্রীক পুরাণে উল্লিখিত খুবই জনপ্রিয় একটি জীব যার উপরিভাগ মানুষ এবং দেহের নিচের অংশ ঘোড়ার। গ্রীক পুরাণ মতে এরা সামাজিক প্রাণী হয় এবং গভীর বনে থাকে।

ড্রাগন

ড্রাগন বিভিন্ন পুরাণ এবং উপকথায় উল্লিখিত অত্যন্ত শক্তশালী প্রাণী যা আমাদের প্রত্যেকেরই পরিচিত। ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন গল্পে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ড্রাগনের বেশ কিছু প্রজাতি আছে, যেমন -

Wyvern

Qilin

Mushussu

তবে আমাদের সবথেকে পরিচিত দুটি ড্রাগন হলো

ইউরোপীয় ড্রাগন

চাইনিজ/জাপানিজ ড্রাগন

ব্যাসিলাস্ক

গ্রীক পুরাণ মতে ব্যসিলাস্ক হলো সাপেদের রাজা। এর জন্ম কাহিনী বেশ অদ্ভুত, কোনো মোরগ যদি সাপের ডিমে তা দেয় তবে এর জন্ম হয়। একে দেখতেও সাপ আর মোরগের মিশ্রণ, এর দেহ মোরগের কিন্তু লেজ ও জিভ সাপের। এবার এর গলাও কিছুটা সাপের মতো। বলা হয় যে এর চোখে চোখ রাখা মাত্রই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়।

কোনো কোনো মতে এটিও ড্রাগনের একটি প্রজাতি।

ক্র্যাকেন

সমুদ্রগর্ভে বসবাসকারী এক বিশাল হিংস্র দানব এই ক্র্যকেন। এর সঠিক বিবরণ কোথাও ঠিক করে দেওয়া হয়নি, তবে বলা হয় যে এটি এতটাই বিশাল, যে একটি জাহাজ নাকি এর সামনে খেলনার মতো। এর শরীরে অক্টোপাসের মতো অনেকগুলি হাত আছে। ১৮ শতকে অনেকে একে দেখার দাবিও করে। বলা হয় মাছ ধরার সময় হঠাৎ করে যদি জালে বেশী বেশী মাছ উঠতে শুরু করে তাহলে তাদের সেই মুহূর্তে পারে ফিরে আসা উচিত, কারন সেই মাছগুলি নাকি ক্র্যাকেনের ভয়েই দলে দলে সেদিকে পালিয়ে আসছে।

স্ফিংস

স্ফিংস মিশরের পৌরাণিক জীব, যার সিংহের দেহের ওপর নারী মস্তক এবং দুটি বিশাল ডানা। এটি শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তার প্রতীক, পিরামিডের পাশাপাশি এর বহু মুর্তি দেখা যায়।

কাহিনী অনুযায়ী স্ফিংস মরুভূমিতে যাতায়াতকারী সকলকে দাড় করিয়ে একটি ধাঁধা জিজ্ঞাসা করে, আর তার তার উত্তর না পারলে সে সেই মানুষকে মেরে ফেলে। কিন্তু সে যদি উত্তর দিতে পারে তাহলে স্ফিংস নিজেই আত্মহত্যা করে নেয়।

বুরাক

ইসলামিক উপকথায় বর্ণিত একপ্রকার অদ্ভুত জীব যার দেহ গাধার কিন্তু মাথা এক নারীর। ইসলামীক কাহিনী অনুসারে মহম্মদ এই বুরাকের পিঠে চড়ে সাত আসমান পাড় করে আল্লাহর সিংহাসন অবধি পৌঁছেছিলেন।

কাপ্পা

কাপ্পা জাপানের উপকথায় বর্ণিত খুব হিংস্র প্রাণী, যার শরীর ব্যাঙের মত, চঞ্চু ও লিপ্তপদ হাঁসের মত এবং এর পিঠে কচ্ছপের মতো খাল। বলা হয় এরা জলে থাকতো এবং রাতের অন্ধকারে মানুষের ওপর আক্রমণ করতো। আর এরা নাকি বাচ্চাদের ওপরেই আক্রমণ বেশি করতো।

ফন

ফন রোমান পৌরাণিক কাহিনীর উল্লিখিত প্রাণী যার দেহের ওপরিভাগ মানুষের মতো আর কোমরের নিচের অংশ ছাগলের মত।

ম্যান্টিকোর

ম্যান্টিকোর গ্রীক পুরাণের এক অত্যন্ত হিংস্র, বিপজ্জনক, আক্রমণাত্মক পশু, যার দেহ সিংহের, মাথা মানুষের এবং লেজ একটি বিছের।

সাইনোসেফালি

মিশরীয় পুরাণে উল্লিখিত হিংস্র এবং মাংসাশী জীব যার মানুষের দেহ এবং কুকুর/শেয়ালের মাথা। বহু মিশরীয় চিত্রকলায় এর ছবি দেখা যায়।

মোনোপদ

মোনোপদ গ্রীক এবং রোমান পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত বামনাকৃতি মানব যাদের একটি মাত্র পা ছিলো। কিন্তু এদের সেই একটি পা এতটাই বড়ো যে দুপুরের কড়া রোদে সেটাকে তারা ছাতার মতো ব্যবহার করতো।


এছাড়াও আরও কিছু পৌরাণিক প্রাণী পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতায় দেখা যায় যেমনঃ 


  • নরওয়ে দেশের পুরাণে জরমুংগ্যান্ড নামে এক বিশালাকার সাপের কথা বলা আছে। সে নাকি সমুদ্রে থাকে, আর মাঝে মাঝেই সাঁতার কেটে পৃথিবীর শেষপ্রান্তে তীরে গিয়ে ওঠে। সেখানে সে লড়াই করে দেবতাদের সাথে।
  • মধ্যপ্রাচ্যের পুরাণকথায় প্রথম 'গ্রাইফোনের 'উল্লেখ পাওয়া যায়। গ্রাইফোন হল সিংহ আর ঈগল পাখির মিলিত রূপ।
  • বাইবেল আর গ্রিক উপকথায় পাওয়া যায় 'ককাট্রিসে' -কে। এ এক অদ্ভুত প্রাণী — সাপের শরীর অথচ তাতে মুরগির পাখা আর ড্রাগনের লেজ।
  • 'মেডুসা দ্য গর্গন ' হল গ্রিক পুরাণের এক দানবী। তার মাথায় থাকে অজস্র সাপ। কেউ তার মুখের দিকে তাকালেই পাথর হয়ে যেত!!
  • 'ফিনিক্স ' পাখির নাম মোটামুটি আমাদের সবারই জানা। এই ফিনিক্স পাখি নিজের শরীরে আগুন দিয়ে মারা যায়। পরে সেই ছাই থেকে জন্ম নেয় আবার।
  • 'ইউনিকর্ন '- কে আমরা অনেক হলিউড ও বলিউড মুভিতে দেখতে পাই। এদের বিশেষত্ব হলো শরীরটা ঘোড়ার মতো, কিন্তু মাথায় একটা পাকানো শিং আছে।
  • 'বুনিপ' — কি কিছু মনে পড়ল? 'চাঁদের পাহাড় ' উপন্যাসের সেই ভয়ংকর জীবটির নামই ছিল বুনিপ। অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীদের লোককথায় আছে জলাভূমির দানব বুনিপের কথা।
  • গ্রিক পুরাণে উল্লেখ আছে তিন মাথাওয়ালা দানব 'সারবেরাস'-এর কথা। বীর হেরাক্লিস এদের টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছিলেন ইউরিসথিয়াসের রাজদরবারে। আর তারপর তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ছিলেন পাতালপুরীতে।
  • গ্রিক পুরাণে আরও এক দানবের কথা পাওয়া যায়। এর মাথাটা সিংহের, লেজটা সাপের আর শরীরটা ছাগলের।আর এই দানবের নাম 'কিমিরা'।
  • 'মৎস্যকন্যা'-শব্দটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে সুন্দরী মেয়ে যার অর্ধেক শরীর মানুষের মতো আর বাকি অর্ধেকটা মাছের মতো। পুরাকাল থেকে মানুষজনের ধারণা, যদি কেউ মৎস্যকন্যার চিরুনি খুঁজে পায় তাহলে তার যেকোনো একটি ইচ্ছে পূরণ হয়।
  • সবশেষে আমাদের বাংলার রূপকথার কথা না বললেই চলে না। রূপকথার গল্পে সমৃদ্ধ আমাদের বাংলা ভাষাতেও রয়েছে ব্যাঙ্গমাব্যাঙ্গমীর মতো আজব পাখি আর পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প। যা গ্রীক মাইথলজিতে Pegasus নামে পরিচিত।  


সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts