পৃথিবীতে কতশত দিবস আছে, সেটা হয়তো আপনি নিয়ম করে মনে রাখেন না। তবে আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন, তবে আজকের দিনটি অবশ্যই আপনাকে মনে রাখতে হবে। কারণ, দিনটি শুধুই আপনার। আজ ১৯ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস।পুরুষদের মধ্যে সমতা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতেই বিশ্ব পুরুষ দিবসের উদ্যাপন।
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের সূচনা হয় ১৯৯২-এর ৭ ফেব্রুয়ারি। টমাস অস্টার নামে এক ব্যক্তি দিবসটি পালন শুরু করেন। পরিকল্পনা হয়েছিল তারও একবছর আগে, অর্থাৎ ১৯৯১-এর ৪ ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৯-এ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে এ বিশেষ দিন উদযাপন পুনরায় শুরু হয়।
পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম করা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ইতিহাস বেশ পুরোনো।
১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে। ২০০২ সালে দিবসটির নামকরণ করা হয় ‘ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ তখনকার সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এই দিবসটি পালন করা হতো।
বলা যায়, নারী দিবসের অনুরূপভাবেই দিবসটি পালিত হয়। ষাটের দশক থেকেই পুরুষ দিবস পালনের জন্য লেখালেখি চলছে। ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস নিজের লেখায় এ দিবসটি পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি। অংশগ্রহণও ছিল কম। পরবর্তী সময়ে ১৯ নভেম্বর পুরো বিশ্বে পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এবছরের থিম ছিল, পজিটিভ পুরুষ রোল মডেল গড়ে তোলা ও পুরুষজীবনের কিছু অনালোচিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা— যেমন পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য, টক্সিক ম্যাস্কুলিনিটি, পুরুষের ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার হার৷ লক্ষ করুন, টক্সিক ম্যাসকুলিনিটিকে কিন্তু ‘সমস্যা’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বলছে, এ’বছর ফোকাস করা হয়েছে ‘men’s and boy’s health, improving gender relations, promoting gender equality, and highlighting positive male role models’-এর উপর।
এই দিনকে ঘিরে জীবনধারা ও ফ্যাশনবিষয়ক ওয়েবসাইট ব্লোডস্কাই জানিয়েছে মজার তথ্য। এই সমাজে পুরুষেরাও বেশ কিছু কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে উঠেছে। সেই কথাগুলোর কয়েকটি তালিকাও প্রকাশ করেছে তারা। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই কথাগুলো—
‘আসল পুরুষ কাঁদে না’
আমাদের সমাজ এই ধারণায় বিশ্বাস করে, কেবল নারী ও শিশুরা কান্নাকাটি করে। সম্ভবত তারা এ সত্যটি উপলব্ধি করতে পারে না যে একজন পুরুষেরও দুঃখবোধ থাকতে পারে, কষ্ট থাকতে পারে। এর সঙ্গে লিঙ্গের কোনো যোগসূত্র নেই।
‘পুরুষেরা গোলাপি ও হলুদ পোশাক পরে না’
পুরুষেরা গোলাপি ও হলুদ রঙের পোশাক পরলে এই সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়। এর কী কারণ সেটা অজানা, তবে কোনো নির্দিষ্ট রং কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের জন্য সৃষ্টি হয়েছে, এমন ইতিহাস নেই।
‘পুরুষেরা ব্যথা অনুভব করে না’
সত্যি? ঈশ্বর কি পুরুষদের ব্যথা এড়াতে আলাদা কোনো বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি করেছেন? এমনটি যদি না হয়ে থাকে, তাহলে পুরুষেরা ব্যথা অনুভব করবেন না কেন? তাদের শরীর ও মনে তো ব্যথা অনুভব করার সমস্ত উপকরণ আছে।
‘গোঁফ ও দাড়ি প্রকৃত পুরুষ করে তোলে’
এই সমাজ গোঁফ ও দাড়ি না রাখলে পুরুষই ভাবতে চায় না। আপনার সমস্ত পুরুষত্ব যেন ফুটে ওঠে ওই গোঁফ ও দাড়িতে। যদিও এই ব্যাখ্যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
‘পুরুষের উচিত নারীর দায়িত্ব নেওয়া’
আপনার মা, স্ত্রী, কন্যা, বোন এবং বান্ধবীর যত্ন নিঃসন্দেহে আপনি নিতে পারেন। এগুলো সেরা কাজ। তবে উপার্জন করে তাদের দায়িত্ব পুরুষদের গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করে আমাদের সমাজ, যেটা ঠিক নয়। পুরুষ যদি স্বনির্ভর হতে পারে, তবে নারীও পারে।
‘খেলাধুলায় আগ্রহ না থাকলে আপনি পুরুষ নন’
আপনি খেলাধুলায় আগ্রহী নন, এর অর্থ এই সমাজে আপনি পুরুষ নন। অথচ খেলাধুলা পছন্দ বা অপছন্দ ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যাপার।
‘সিনেমা দেখে কাঁদলে আপনি পুরুষ নন’
সিনেমার কোনো দৃশ্য পুরুষ ও নারী উভয়ের কাছে সংবেদনশীল হতে পারে, সেটার জন্য যে কেউ আবেগে ভাসতে পারে। সিনেমা দেখে কাঁদা মেয়েশিশুর বৈশিষ্ট্যযুক্ত, এ কথার কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নেই।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এই দিবসের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছেঃ
- পুরুষ ও বালকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি;
- নারী-পুরুষের লৈঙ্গিক সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ক প্রচারণা;
- নারী-পুরুষের লৈঙ্গিক সাম্যতার প্রচার;
- পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা;
- পুরুষ ও বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী;
- পুরুষ ও বালকদের অর্জন ও অবদানকে উদযাপন;
- সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশু যত্নের ক্ষেত্রে পুরুষ ও বালকদের অবদানকে তুলে ধরা।