ইস্কনি কৃৈষ্ণব আর বৈষ্ণবরা প্রায়ই ভাগবতে কৃষ্ণ আর মহাদেবের যুদ্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলে, মহাদেবকে কৃষ্ণ হারিয়েছিল তার কৃষ্ণই শিবাপেক্ষা অধিক শক্তিশালী।
আসলে ওরা জানে না এর উত্তর মহাভারতেই দাওয়া আছে। মহাভারতে গুরু দ্রোণ আর পিতামহ ভীষ্ম যখন উভয় পক্ষের যোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা করেন তখন বলেন, "কৃষ্ণার্জুন দ্বৈতকে শুধুমাত্র শিবই হারাতে পারে।" যদিও কর্ণ এবং দুর্যোধন এর বিরোধিতা করে।
আসলে ওরা জানে না এর উত্তর মহাভারতেই দাওয়া আছে। মহাভারতে গুরু দ্রোণ আর পিতামহ ভীষ্ম যখন উভয় পক্ষের যোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা করেন তখন বলেন, "কৃষ্ণার্জুন দ্বৈতকে শুধুমাত্র শিবই হারাতে পারে।" যদিও কর্ণ এবং দুর্যোধন এর বিরোধিতা করে।
কিন্তু জানেন কি শিব কুরুক্ষেত্রে কৃষ্ণার্জুন এর (একই সাথে পক্ষে এবং) বিপক্ষে যুদ্ধকরেন। হ্যা, অশ্বত্থামার কথা বলছি। তিনি শিব তথা রুদ্রের অবতার ছিলেন। তার সম্পর্কেও ভীষ্ম পিতামহ বলেন তার মত যোদ্ধা উভয় পক্ষের কেউই নেই। কিন্তু তিনি নিজের প্রাণের মোহ ত্যাগ করতে পারেন না, যদি তিনি তা ত্যাগ করতে পারেন তবে তাকে আটকে পারবে না।
আশ্চর্য হতে পারেন, অশ্বত্থামা যুদ্ধে ছিলেন তবুও কেন পাণ্ডবরা জয়ী হলো? এর উত্তরটা মনে রাখুন এর উত্তরেই বৈষ্ণবদের প্রশ্নের জবাব আছে।
কুরুক্ষেত্রে কৃষ্ণার্জুনের বিপক্ষে বিভিন্ন দৈবাস্ত্র প্রয়োগ করেও আশ্বত্থামা অবাক হলেন যে তার বাণ থেকে নির্গত কোন দৈবাস্ত্রই তাদের স্পর্শ করছে না, কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এদেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে কৃষ্ণার্জুন দ্বৈত সাধারণ কেউ নয়। তিনি তার রথ ঘুরিয়ে সরস্বতী নদীর তীরে নিয়ে বেদব্যাসকে প্রশ্ন করলে ভগবান তাকে তার রহস্য উন্মোচন করেন।
বেদব্যাস বলেন, "কৃষ্ণার্জুন আগের জন্মে নর-নারায়ণ ঋষি ছিলেন। তারা মহাশিব ভক্ত ছিলেন। তারা ঘোর তপস্যা করে শিবের থেকে বর লাভ করেন। ভগবান শিব তাদের বরদেন যে তারা সর্বদাই যুদ্ধে বিজয়ী হবেন, এমনকি শিবের সাথে যুদ্ধ করলেও তারাই জয়ী হবে। অশ্বত্থামা নিজে রুদ্রাবতার, তাই তার হাতের কোন দৈবাস্ত্র কৃষ্ণার্জনের কোন ক্ষতি করে না।"
বেদব্যাস বলেন, "কৃষ্ণার্জুন আগের জন্মে নর-নারায়ণ ঋষি ছিলেন। তারা মহাশিব ভক্ত ছিলেন। তারা ঘোর তপস্যা করে শিবের থেকে বর লাভ করেন। ভগবান শিব তাদের বরদেন যে তারা সর্বদাই যুদ্ধে বিজয়ী হবেন, এমনকি শিবের সাথে যুদ্ধ করলেও তারাই জয়ী হবে। অশ্বত্থামা নিজে রুদ্রাবতার, তাই তার হাতের কোন দৈবাস্ত্র কৃষ্ণার্জনের কোন ক্ষতি করে না।"
বুঝলেন তো কার বলে কৃষ্ণ জগতজয়ী, আর তার ভক্তরা করে বেড়ায় শিবনিন্দা। প্রমাণ নিম্নে বর্ণিত একদম রেফারেন্স সহ।
অর্জুন উবাচঃ
_____________
"সংগ্রামে ন্যহনম শত্রুন্সুরুঘইরবিমলৈরহম।
অগ্রতো লক্ষ্যয়ে যান্তম পুরুষম পাবকপ্রভম।। ৪
জ্বলন্তম শূলমুদ্যম্য যা দিশম প্রতিপদ্যতে।
তস্যা দিশি বিদির্যান্তে শত্রভো মে মহামুনে।। ৫
তেন ভগ্নানরিসর্বন্মদ্ভগনান্মন্যতে জনহ্।
তেন ভগ্নানি সৈন্যানি প্রস্থতো নুব্রজাম্যহম।। ৬
ভগবমস্তন্মমাচাক্ষব কো বৈ স পুরুষোত্তমঃ।
শূলপাণির্ময়া দ্রষ্টস্তেজসা সূর্য্যসন্নিভিঃ।। ৭
ন পদ্ভয়া স্প্রশতে ভূমি না চ শূলম বিভুঞ্চতি।
শূলাচ্ছূলসহস্রানি নিষ্পেতুসতস্য তেজসা।।"৮
~ মহাভারত (৭/২০২ঃ৪-৮)
অনুবাদঃ
__________
" হে মহামুনি, যুদ্ধের সময় একদিন লক্ষ্য করলাম যে আমার রথের অগ্রে এক উগ্র অগ্নি সদৃশ পুরুষ বিচরণ করছেন,তাঁর হাতে জ্বলন্ত শূল, মনে হচ্ছিলো যেন সূর্য্য ও অগ্নির সকল তেজ তাঁর শরীরেই পুঞ্জীভূত হয়েছে। আমার অস্ত্রসমূহের অনেক পূর্বে গিয়েই তিনি আমার শত্রুদের বধ করে রাখছিলেন। আমার অস্ত্রগুলো কেবল শত্রুদের মৃত শরীরে আঘাত করছিল। সেই পুরুষের পদতল ভূমি স্পর্শ করছিল না। হে ঋষি, আমাকে বলুন উগ্রতেজস্বী সেই পুরুষোত্তম কে ছিলেন?"
মহর্ষি বেদব্যাস পরবর্তী ২ শ্লোকে অর্জুনের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলছেনঃ
ব্যাস উবাচঃ
_____________
"শূলপাণিমহাকর্ষণ তেজসা সূর্য্যসন্নিবাহঃ।
প্রজাপতিনা প্রথমম তৈজসম,পুরুষম প্রভুম।
ভুবনাম ভূর্ভূবম দেবম সর্বলোকেশ্বরম প্রভুম।। ৯
ঈশানাম বরদাম পার্থ দ্রষ্টবানসি শঙ্করম।
তম গচ্ছ শরণম দেবার্মম বরদম ভূবনেশ্বরম।।" ১০
~ মহাভারত (৭/২০২:৯-১০)
অনুবাদঃ
___________
"বৎস ! তুমি শূলহস্তা যে তেজস্বী পুরুষকে দেখেছ তিনি ভগবান শঙ্কর, যার থেকে প্রজাপতিগণের সৃষ্টি হয়েছিলো। ইনি ত্রিভুবনকে ধারণ করেন তাই সর্বলোকের ঈশ্বর ও প্রভু।তাই এনাকে ঈশানও বলা হয়।হে পার্থ তুমি সেই অভীষ্ট বর প্রদানকারী ভগবান ভুবনেশ্বরের শরণাপন্ন হও।"
বস্তুতঃ যজুর্বেদের শ্রীরুদ্রমের নিম্নোক্ত মন্ত্রেই ভগবান রুদ্রদেবকে এই বলে স্তুতি করা হয়েছে যে তিনি তাঁর ভক্তদের সকল শত্রুদের পূর্বেই বধ করে রাখেন।
"নমো অগ্রেবধায় চ, দূরে বধায় চ।।"
~ যজুর্বেদ (৪/৫/৮)।
অনুবাদ ;
"সেই রুদ্রদেবকে নমষ্কার যিনি ভক্তের আগে গিয়ে শত্রুকে সংহার করেন এবং দূরে থেকে শত্রুর মনোবল হরণ করেন।।"