Tuesday, April 7, 2020

আলেকজান্ডার আর নাগা সন্ন্যাসী গোষ্ঠীর এক রহস্যাবৃত কাহিনী-দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব

প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ https://avijitprataproy.blogspot.com/2020/03/blog-post.html

পারস্যে ফেরার পরে বছর দুয়ের মধ্যেই কালানাস ক্রমশ অসুস্থ হয়ে যায়। আলেকজান্ডার কে সে বোঝাতে স্বক্ষম হয় যে তার আত্মাহুতি দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। এক পর্যায়ে অসুস্থ এই মানুষটি তার জন্য সজ্জিত চিতায় উঠে তাতে  আগুন দিতে বলে। বিস্ময়ের সাথে আলেকজান্ডার আর তার সেনাদল দেখে লোকটি একটিও সাড়া শব্দ ছাড়া এই আগুনে পুড়ে মারা যায়।এই  বর্ণনার তিনটি ব্যক্তির মাধ্যমে বর্ণিত হলেও একটি জায়গা তিনজনেই বলছে  যা হলো অদ্ভুত ভাবে লোকটি তার যা কিছু উপহার বা প্রাপ্তি ছিল সব কিছুই আশেপাশের মানুষ বা ততদিনে পরিচিত গ্রিক গোষ্ঠির কাছে দিয়ে গিয়েছিল।আলেকজান্ডার বা তার সেনা একটা সার্বিক সমারোহের মতো আয়োজন করে এবং হাতি বা অন্য সামরিক বাহিনীর শেষ অভিবাদন সহ লোকটিকে এই চিতার আগুনে আত্মহত্যা করার বিষয়টি সম্মান জানায়।এতে কি প্রমান হয়? এই প্রমান হয় যে আলোচিত মানুষ মানে কালানাস বা কল্যাণ আখ্যা দেওয়া লোকটি কোনো বস্তুগত লোভে আলেকজান্ডারের সাথে যায় নি। একই সাথে  বছরের সাহচর্যের পরেও তাঁর প্রতি আলেকজান্ডার বা তার দলের সম্ভ্রম বা ভালোবাসার অভাব হয় নি।
একটু অন্য ভাবে ভাবলে কালানাস/কল্যাণ এর এই যাওয়া নিজের ইচ্ছায় না আলেকজান্ডারের জোর করে একটি এই অঞ্চলের কোনো নমুনা নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তা আজ আর জানার কোনো উপায় নেই।যাই হোক ,এই আত্মাহুতির আগে এই কালানাস/কল্যাণ আলেকজান্ডার বা ওনিসিক্রিটাস কে জানায় যে আগুন এতো সর্বগ্রাসী আর মানুষের পক্ষে জীবন বা সম্পত্তির ক্ষতি করে সেই আগুন কে তাঁরা ভয় পায় না ,প্রয়োজনে এতেই আত্মবিসর্জন দেয় তাঁরা।এই জায়গাটি কিন্তু মাথায় রাখবেন।
স্ট্র্যাবো পক্ষান্তরে একই ভাবে আবার কালানাস এর নিন্দা করেছে আলেকজান্ডারের বশীভূত হয়ে নিজের সত্বা বিসর্জন দেওয়ার জন্য। মত যাই হয়ে থাক,একটা জিনিস দেখতে পাচ্ছি ,তা হলো মোটের উপরে একটা সার্বিক শ্রদ্ধাবোধ জন্মেছিল এই ভারতীয় সন্ন্যাসী বা দার্শনিকদের উপরে। লক্ষণীয় হলো একই ভাবে গ্রিক দার্শনিক বা চিন্তাবিদের দল একই ধরণের একটি সরল জীবন যাপন বা জ্ঞানের সন্ধানে থাকতেন। এই ভারতীয় সন্ন্যাসীদের বিষয়ে এদের বক্তব্য ,এরা অতি সরল একটি জীবন যাপন করতো ,কোনো সম্পত্তির অধিকারী হতো না।নিরামিষ খাওয়া বা অতি সীমিত খাওয়া আর জ্যোতির্বিদ্যা থেকে দর্শন এবং প্রাকৃতিক নানান বিষয়ে অনুসন্ধান বা জ্ঞানের আহরণ আর একটি পরম্পরায় বজায় রেখে তা ছড়িয়ে দিতো নিজ গোষ্ঠীর মধ্যে।
একই ভাবে আরো একটি জায়গায় দেখতে পাই , কোনো মানুষ এক পর্যায়ে যদি এই ধরণের জীবন বেছে নিতে চাইতো তবে নিজের গ্রাম প্রধান বা অঞ্চলের রাজা বা প্রধানের কাছে তার বাসনা প্রকাশ করলে ওই মানুষটির পরিবার বা তার সম্পত্তির রক্ষার জন্য আঞ্চলিক একটি ব্যবস্থা ছিল।তার স্ত্রী সন্তানের দায়িত্ব নিতো ওই আঞ্চলিক প্রধান। গ্রিক এই লিপিকাররা  বা চিন্তাবিদরা ভারতীয় এই জনগোষ্ঠীর আর এই বিশেষ সন্ন্যাসীদের আত্মা আর শরীরের সম্পর্ক আলাদা এবং আত্মা অবিনশ্বর এই ধারণা সম্বন্ধেও মত প্রকাশ করেছেন।



সমসাময়িক হিসেবে মেগাস্থিনিসের চোখে এই সন্ন্যাসীদের মূল্যায়ন

আলেকজান্ডার বা তার প্রতিনিধির সহচর না হলেও তার প্রধান এবং এই অঞ্চলে আলেকজান্ডারের দখল করা সাম্রাজ্যের একাংশের প্রধান সেলুকাসের প্রতিষ্ঠিত সেলুসিডিও রাজত্বের প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েক বছরের মধ্যেই তার আগমন।এই লোকটি অনেক বছর ভারতে মানে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময়ে ছিল এবং অনেকের জানা আছে যে ইন্ডিকা বলে একটি ভ্রমণ বৃত্তান্ত বা ভারত সমন্ধে নিজের যা কিছু দেখা তাই নিয়ে লেখে। একটা বড় সময় ধরে তার এই থাকা এবং এই নগ্ন সন্ন্যাসীদের বা ভারতীয় সমাজের উপরে নিজের জানার প্রকাশ অনেকটাই এই বিষয়টা পরিষ্কার করে। আগেও যেমন বলেছি , দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দের সময়ে ভারতীয় এক রাজ্ প্রতিনিধির থেকে সিরিয়ায় এক খ্রিস্টান পন্ডিত এবং লিপিকার Bardesanes এই ভারত এবং এই সন্ন্যাসীদের সমন্ধে যা শুনেছেন তা লিপিবদ্ধ করেন। একই ভাবে তার মূল লেখা না পেলেও তার প্রতিলিপি পাওয়া যায় অন্য এক লিপিকার পোরফিরি (Porphyry)র কারণে।এতে বার্ডেসনেস এই গোষ্ঠীকে দুটো ভাগে ভাগ করেছেন ১.ব্রাহ্মন ২.শ্রমণ। অদ্ভুত বিষয় হলো এই সামান্য ব্যবস্থায়  আত্মাহুতির একটা আচার বজায় ছিল।এর জন্য পারিপার্শিক কোনো বাঁধা আসতো না বরং বাকিরা স্বানন্দে এই আত্মহননে যাওয়া মানুষদের শুভেচ্ছা জানাতো পরবর্তী মানে মৃত্যুর পরের অধ্যায়ে যাওয়ার জন্য।এই বর্ণনার সূত্রে একটা জিনিস পাওয়া যাচ্ছে ,যা হলো ওই সন্ন্যাসী গোষ্ঠী বা তাদের একজনের করা আত্মহত্যার বর্ণনা অলীক না।
তার মতে এই ব্রাহ্মনদের আবার দুটো ভাগ ছিল, একটি পাহাড়ে থাকতো আর অন্যটি গঙ্গার তীরের আশেপাশে। দুই দিকের দুই ভাগই নিরামিষ ভোজন এবং পুরো সময় পুজো ,গাঁথা গেয়ে বা প্রার্থনা করে কাটাতো। অতি দীনহীন ভাবে পর্ণকুঠিরে বসবাস করতো দুই পক্ষই।আর শ্রমণ গোষ্ঠীর বর্ণনা অনেকটাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর সাথে সম্পর্ক যুক্ত বলে মনে করা যেতে পারে।মেগাস্থিনিসের লেখার প্রতিলিপি করা গ্র্যাটোর ভাষ্য অনুসারে আবার ওই সময়ে ভারতে সাতটি বর্ণে বিভাজিত ছিল।এর প্রথম দুটি আমাদের আলোচনার সেই সন্ন্যাসী গোষ্ঠীর দুটি ভাগ মানে ব্রাহ্মন এবং শ্রমণ।এদের আবার উপদেশ বা পরামর্শ যদি পরপর তিনটি ভুল প্রমান হয় তবে তাঁরা স্বেচ্ছায় বাকি জীবন মৌন হয়ে যায় নিজেকে শাস্তি দিতে।দুটি গোষ্ঠীই নানান ধর্মীয় আচার,আহুতি বা ঈশ্বরের  কাছে উৎসর্গের কাজ করতো। এরা আবার রাজার অথবা ক্ষমতাসীনের পরামর্শদাতা ও ছিল।এই নিভৃতচারী গোষ্ঠীর একাংশ আবার নানান বর্ণের থেকেও আসতে পারতো।এই জায়গায় বেশ অবাক লাগছে কারণ ,বংশানুক্রমিক প্রথার যে কথা আমরা শুনি তা হয়তো ওই সময়ে আরোপিত হয় নি।

প্রসঙ্গত নানান ঐতিহাসিকদের বনণায় এই শ্রমণ আর ব্রাহ্মন গোষ্ঠী কে এক ভেবে ফেলা তাঁরা মেগাস্থিনিসের একটি ভ্রান্তি বলে বর্ণনা করেছেন। একই  সাতটি বিভাজন কেও তার জানার ভুলের কারণে হয়েছে বলে ধরেছেন। সে যাই হোক , এই ক্ষেত্রে আবার ও পাচ্ছি যে এক শ্রেণী মানে ব্রাহ্মন গোষ্ঠীর মধ্যে পারিবারিক ভাবে একই ধাঁচের অন্য ব্রাহ্মন পন্ডিতের থেকে নিজেদের সন্তানের শিক্ষা লাভের একটি প্রথা ছিল।এরা অতীব কঠিন একটি ব্রহ্মচর্য পালন করতো ৩৭ বছর!আর এর পরে আবার সংসারে ফিরে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন ,একাধিক বিয়ে এবং সন্তানাদি লাভ করার অধিকারী ছিল। এই সময়ে রেশম বা অন্য কাপড় গায়ে দেওয়া , মাংস খাওয়া মানে যে পশু কৃষকের চাষের কাজে না লাগে তা খাওয়ার অধিকারী ছিল(এই জায়গা থেকেই সম্ভবত গরু বা ষাঁড় খাওয়া বন্ধ হয়),একই সাথে এদের বহু বিবাহের প্রথা ও পাওয়া যায়।
এই ব্রাহ্মনদের দর্শন সমন্ধে মেগাস্থিনিস বলছে যে এদের কাছে মানুষের জীবন স্রেফ মাতৃগর্ভে থাকা কোনো প্রাণীর মতো।প্রকৃত সুখ আর সত্যিকারের জীবন হলো মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে।একই সাথে পুর্নজন্ম এবং তার প্রস্তুতি রাখা ও একটি বিশ্বাস ছিল।এদের মতে কোনো কিছুই স্রেফ ভালো বা খারাপ হয় না।কারণ একই খারাপ হয়তো অন্য কারোর জন্য ভালো।একই সাথে তাঁরা মনে করতো এই বিশ্ব সংসার সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তা একদিন নষ্ট হয়ে যাবে।পাঁচটি উপাদানে সব কিছু গঠিত যার পঞ্চমটি স্বর্গীয় বা ঐশ্বরিক রূপের প্রকাশের উপাদান। পক্ষান্তরে শ্রমণদের এক ভাগ বনে বসবাস করতো আর অন্য ভাগ জনপদে ভিক্ষা করে দিন কাটাতো।এদের মধ্যে মহিলা শ্রমণ থাকলেও তাঁরা কেউ বৈবাহিক সম্পর্ক রাখতো না।

প্রশ্ন হলো,এই লোকগুলো মানে এই নগ্ন সন্নাসিরা তা হলে কোন ধর্মের ছিল?

নানান প্রাচীন উপাদান বা বই থেকে দেখতে পাই ওই সময়ে একাধারে বৈদিক ধর্মের থেকে পারসিক এমনকি বৌদ্ধ জৈন ইত্যাদি নানান মতের মানুষ একই সাথে বসবাস করেছেন এই ভারত ভূমিতে(অবিভক্ত) আর এছাড়া এদের অনেকের আচার আচরণ প্রায় একই একটি ধারার থেকে আসার কারণে সমস্যা হয় ঠিক কোন মতের ছিলেন এই সন্নাসীরা তা বুঝতে।এক্ষেত্রে একটু অন্য ভাবে ভাবা যেতে পারে।মানে ইংরেজিতে যাকে বলে প্রসেস অফ এলিমিনেশন মানে একটি করে সম্ভাবনা ধরে তার যৌক্তিক বস্তু কে বিশ্লেষন করে দেখলে আশা করা যায় একটি সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব।
প্রথমেই বাদ দিতে হয় পারসিক ধর্মের কাউকে কারণ এই দুই দিকের সখ্যতা বা পুরু এবং এই অঞ্চলের অন্য রাজাদের সাথে তৎকালীন রাজা ধ্রুবেশ দ্বিতীয় বা দরাযুস দ্বিতীয়ের যোগ থাকলেও এই ধর্মের কোনো জায়গায় এই ধরনের নগ্ন ভাবে চলাচল,প্রকৃতির সাথে থাকা আর সব থেকে বড় উপাস্যর মূল উপাদান অগ্নিতে কোনো আত্মহননের স্থান ছিল না।এক্ষেত্রে তাই বাদ দিলাম পারসিক ধর্মের মানুষদের।
এরপরে ভাবি,এরা কি জৈন ধর্মের মানুষ ছিলেন? তারাও তো প্রায় নগ্ন হয়ে চলাফেরা করতেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তো একই ভাবধারা দেখতে পাই,তবে ? না,এই সম্প্রদায়কে বাতিল করার কারণ হলো আর যাই করুক এরা আগুনে আত্মাহুতি দেবেন না বা তাকে কোনো ধর্মীয় অনুমোদন দেবে না।তাদের এই আত্মহননের প্রথা থাকলেও তা হতো প্রাযপ্রবেশন বা উপোষ করে মারা যাওয়া।এছাড়া আরো সমস্যা আছে,তাদের সেই সময়ের সমাজে স্বীকৃতি সে ভাবে আসে নি ওই সময়ে ফলে রাজানুগ্রহ পাওয়া বা তাদের পরামর্শ শোনার কোনো সম্ভাবনা হয়ে ওঠে নি।আবার মনে করুন সেই আগের পর্বের চার নম্বর প্রশ্নের কথা, রাজাকে সংঘর্ষে যেতে বা বাধা দিতে যে পথের কথা বলা হয়েছে তা মোটেই অহিংস কিছু না আর তা এই ধর্মের সাথে মিশছে না,সুতরাং এটি ও বাতিল করলাম।
তৃতীয় আরো জোরালো একটি সম্ভাবনা আছে , এরা কি বৌদ্ধ শ্রমণ ? তাতে একটা সমস্যা আছে , বৌদ্ধ শ্রমণরা শ্রদ্ধা বা সমাজে জায়গা পেলেও এদের ওই প্রায় নগ্ন থাকা অথবা ওই ধরনের একটা জীবন যাপন তো ছিল না।এ ছাড়া এদের পরিব্রাজক হয়ে যাওয়ার বাধা তো সে ভাবে ছিল না।তাহলে আলোচিত ওই দ্বিতীয় সন্নাসী মানে কথিত কালানাস বা কল্যাণ বলে উল্লেখিত মানুষটির আলেকজান্ডারের সাথে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি ঠিক কেন ছিল ? একই ভাবে যুদ্ধে যাওয়ার উপদেশ দেওয়া ও তো বৌদ্ধদের আচরণের সাথে মিলছে না।একই সাথে মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকার যে টুকু অংশ পাওয়া গিয়েছে তার ভাষ্য অনুযায়ী দেখতে পাই এই সময়ের শ্রমণ গোষ্ঠী কে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছেন তিনি।একটি বনবাসী আর অন্য অংশ গ্রামের বা মানুষের সাথে থেকে নানান ভাবে সহযোগিতা আর মাধুকরী করে বেড়ানোর কথা বলেছেন।এবার সেই মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকার স্মরনাপন্ন আবার হওয়া যাক।
এই লেখাতে মেগাস্থিনিস সেই কালানাস এর গুরু বা ওই গোষ্ঠির সব থেকে বয়স্ক মানুষটি মানে দন্ডানাস বা মান্দানাস এর প্রশংসা করেছেন এই বলে যে জাগতিক সব বৈভবের লোভ সে উড়িয়ে দিয়ে আলেকজান্ডার কে বা তার প্রতিনিধিকে বলে যে আলেকজান্ডারের থেকে তার চাওয়ার কিছু নেই , একটি মজার কথা আসছে,যা আছে তার ইংরেজি ভাষ্য কে বাংলা করলে দেখা যায় এই মানুষটি বলছেন “ বলে দাও তোমাদের আলেকজান্ডারকে যে এই ব্রাহ্মণ বিলাস ব্যসন বা জাগতিক কোনো মোহে আকর্ষিত না “ , হুম এখন কথা হচ্ছে,এটি যদি মেগাস্থিনিসের ভুল ভাবনা হয়ে থাকে?অথবা অসত্য বলে থাকে? সে ক্ষেত্রে এই দন্ডানাস বা মন্দানাস এর সাথে আলাপের অন্য অংশ গুলোও সঙ্গতি ছাড়া হয়।দেখতে পাই.এই মানুষটির ভাবনা ছিল,আলেকজান্ডার তাকে হত্যা করতে পারে তবে তার আত্মা এই দেহ ছেড়ে চলে যাবে ইশ্বর বা পরমাত্মার কাছে জীর্ণ বস্ত্র ছেড়ে যাওয়ার মতো করে আর তাতে তার কিছুই আসে যায় না।আরো বলছে যে এই মৃত্যুর পরে তার হিতাহিত বা ধর্মাধর্মের বিচার করবে সেই ইশ্বর সুতরাং তার কোনো কিছু পাওয়ার নেই এই ইহজগতে।এই ধরনের ভাবনা মানে ইশ্বর বা বিচারের ক্ষেত্র তো বৌদ্ধ ধর্ম দেয় না !
আরো একটু যদি এই ইন্ডিকা থেকে আগে পিছে দেখা যায় তবে দেখবেন এই কল্যাণ বা কালানাস কে গোষ্ঠী ছেড়ে যাওয়ার জন্য নিন্দা বা ঘৃনা করার সঙ্গে সেই সময়ের ওই ম্লেচ্ছ বা যবন ভূমির একটা বিভাজন ও পাবেন যা পরবর্তিতে সংস্কারের মতো হয়েছিল একদম সম্প্রতির হিন্দু গোষ্ঠির সাগর পেরিয়ে বিলেতে যাওয়ার বিষয়ে।এবার যদি ওই আগুনে আত্মাহুতির প্রসঙ্গ ভাবেন তবে দেখবেন একটি চরম প্রায়শ্চিত্য পাবেন হিন্দু ধর্মে যাকে বলে তুষানলে প্রবেশ করে নিজেকে শেষ করা আর একই ভাবে ঔজ্জ্বল্য পেয়েছিল অনেক সদ্য প্রয়াত স্বামীর সাথে সহমরণে যাওয়া মহিলার সতী হওয়া তে।

এই ধারা আমরা দেখেছি পরবর্তী নানান সময়ে,অনেক সময়ে হয়তো পরবর্তী বর্ণাশ্রমের ধার না ধরে নানান বর্ণের মানুষ সন্নাসী হয়েছে তাতে ধারা কিন্তু একই রয়ে গিয়েছে।এরা ব্যক্তি মোক্ষকে মাথায় রেখে অসংসারী হয় আর একটি স্ব-আরোপিত কৃচ্ছসাধনের পথে জীবন কে চালনা করে।

উপরের এই বিশ্লেষন একান্ত আমার নিজের আর তাতে যা কিছু পড়েছি তার একটি তথ্যসূত্র আগেও দিয়েছিলাম।এবার সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছি মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা বইয়ের ইংরেজিতে রূপান্তর আর সটিকা আরো একটি বই।পাঠক যদি অন্য কোনো বাখ্যা যুক্তি সহকারে দেন তবে কৃতজ্ঞ চিত্তে গ্রহন করবো ।

সবাইকে ধন্যবাদ !

তশ্যসুত্র :
১. টিকা যুক্ত এই বইটি পাবেন এই সুত্রে গিয়ে https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.172447/page/n1/mode/2up
২. অসাধারণ আরো একটি একই ধরনের বই পাবেন এই সুত্রে
https://archive.org/details/AncientIndiaAsDescribedByMegasthenesAndArrianByMccrindleJ.W/page/n121/mode/2up
৩. একটু অন্য ভাবে লেখা এইই বিষয়ে এই লেখাটি পাবেন এই জায়গায়
https://scholarworks.wm.edu/cgi/viewcontent.cgi?article=1371&context=honorstheses
৪. আরো পাবেন এই সুত্রে https://www.livius.org/sources/content/strabo-of-amasia/alexander-and-the-brahmans/



Monday, April 6, 2020

মহাভারত নিয়ে বিস্তারিত

শাস্ত্রজ্ঞরা বলে থাকেন মহাভারত তিন বার লেখা হয়েছিল। একবার ৮৮০০ শ্লোকে, একবার ২৪০০০ হাজার শ্লোকে আর একবার ১ লাখ শ্লোকে। মূলত এই কারণে মহাভারতকে ‘শতসাহস্রী সংহিতা’ বলা হয়। আবার অনেকেই মনে করেন প্রাচীন মহাভারতের শব্দশৈলীর সাথে বর্তমান মহাভারত খুবই সহজ প্রকৃতির। অবশ্য এই কথাটি মহাভারতও স্বিকার করে। বিভিন্ন গবেষকদের মতে মহাভারত প্রথমে ‘‘জয়া’’ নামে ছিল। এবং এই ‘‘জয়া’’ গ্রন্থটিই ৮৮০০ শ্লোকের ছিল। তারপর জয়া থেকে সৃষ্টি হলো ‘‘ভারত সংহিতা’’। সেই সময়েই ৮৮০০ শ্লোক থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৪০০০ শ্লোকে রূপান্তর হয়। এর বহুপর ভারত সংহিতা যখন ‘‘মহাভারত’’ এ পরিবর্তিত হয় তখন এর শ্লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষতে পৌঁছায়।



পণ্ডিতদের মধ্যে অনেকেই বলে থাকেন বেদব্যাস ১৮ টি পুরাণ লিখেছিলেন পরে মহাভারত রচনা করেছিলেন।
কথাটি ঠিক নয়, কারণ বেদব্যাসের বাবা বিষ্ণুপুরান লিখেছিলেন আর ছেলে ভাগবত পুরাণ রচনা করেছিলেন। মাঝখানে বেদব্যাস লিখেছেন বায়ুপুরাণ। এছাড়া অন্য গুলো আদৌ বেদব্যাস ছিলে ছিলেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। কারণ ভাষা এবং রচনাশৈলীতে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এমনকি একই ঘটনার মাঝেও আছে ভিন্নতা। অনেকেই বলে থাকেন এগুলো রূপক। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। যদি রূপকই হয় তাহলে বেদব্যাস আরো অনেক চরিত্র কেন নির্মান করলেন না? একই চরিত্র দিয়ে একই বিষয় সমূহের বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ কেন হবে ?



খ্রীষ্টপূর্ব ২ শতক থেকে ষোড়শ শতক অবধি পুরাণের গল্প আর মহাভারতের গল্প একাকার হয়ে দেশের মানুষের মুখে মুখে ফিরত। আমরা জানি মূল মহাভারতে ১৮টি পর্ব আছে কিন্তু সংস্কৃত মহাভারতে ১৮ পর্ব ছাড়াও বেদব্যাস মহাভারত ও হরিবংশকে ১০০ ছোট ছোট পর্বে ভাগ করেছিলেন। হরিবংশে ২টি এবং মহাভারতে আটানব্বইটি । প্রথমটির নাম অনুক্রমণিকাপর্ব দ্বিতীয়টির নাম পর্বসংগ্ররপর্ব। এই দুটি পর্ব পড়লে মনে হবে মহাভারত অন্তত পাঁচবার সংস্কার হয়েছে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কতৃপক্ষ ৯৮৫ সালের কাশীরাম দাসের মহাভারতের পুঁথিটি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়কে দেখার জন্য বলেন, তখন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় সেই পুঁথি থেকে প্রথম কাশীদাসী মহাভারত ছাপার ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুর করেন। ১৩৩৫ সালে শ্রীযুক্ত বিমলাচরণ লাহার অর্থানুকুল্যে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় কাশীদাসী মহাভারত প্রকাশ পায়, দাম ছিল চার টাকা। যদিও ১৯৩২ সালে পূর্ণ চন্দ্র শীল একটি কাশীদাসী মহাভারত প্রকাশ করেছিলেন। তারও দাম ছিল সাড়ে চার টাকা।


সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts