Tuesday, September 24, 2019

কোন স্বপ্ন দেখলে কি ফল হয়

স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি।
 মানুষের মন দুই প্রকার --
১. চেতন মন বা কনসাস মাইন্ড
২. অবচেতন মন বা সাব কনসাস মাইন্ড।
মানুষ যখন জাগ্রত অবস্থায় চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া, সমস্থ ধরনের কাজ সম্পাদন করে চলে তখন তাদের মন চেতন বা কনসাস মাইন্ডের থাকে। এইসময় অবচেতন বা সাব কনসাস মাইন্ড নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। আর মানুষ যখন ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে তখন অবচেতন মনের ক্রিয়া শুরু হয়। এই অবচেতন মনই স্বপ্নের মূল কারন। মানুশের সচেতন মন জাগ্রত অবস্থাই যা যা করে, দেখে বা অনুমান করে অবচেতন মন তা নিদ্রিত অবস্থাই সচেতন মন দৃষ্ট বিষয় বস্তুকে স্বপ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করায়। এই প্রকাশই স্বপ্ন।
কি স্বপ্ন দেখলে কি ফল হয় ----(কিছু স্বপ্নের ফলাদেশ দেওয়া হল)
* আকাশ- উন্নতি, খুশি, সুখ
*আকাশে উড়া- ইচ্ছা পূরন।
* আগুন- কোন ভালবাসার মানুষের সাথে মিলিত হওয়া।
* আয়না - কোন ভালবাসার মানুশের সাথে ছিন্ন হওয়া।
* সূর্য- সম্পদ লাভ ও উন্নতি।
* অন্ধ মানুশ- ভ্রমন ভয় যুক্ত।
* বৃষ্টি- ঝগড়া, রোগ
* চুলকাটা - তর্কের অবসান
* মেঘ- ভ্রমন, যোগাযোগ ছিন্ন।
* দরজা বন্ধ করা- ভয় ও হারানো।
* নারী বা পরুষ (ক্রন্দনরত)- সুখবর প্রপ্তি ও বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করার প্রচেষ্টা
* বিবাহ- ভয় ও বিপদ
* দৈহিক মিলন- প্রাপ্তি
* বাথটব- সন্মানসূচক আলোচনা।
* নৃত্যশালা- ভাল সময়ের আগমন বার্তা।
* সাঁতার- উন্নতি ( বিশেষ ভাবে কর্মক্ষেত্রে)
* মাটি কোপান- ভয়ের বার্তা।
* সর্প ধরা- শত্রুজয় সুনিশ্চিত।
* সাপে কামড়নো- ভয় ও আতঙ্ক।
* সাপ দেখার স্বপ্ন- শত্রুর ধংসাত্মক পরিকল্পনা।
* নৌকায় চড়া- বদনাম ও ভয়
* নৌকাহতে নামা- ভয় ও ভীতির মুক্তি
* চুমু খাওয়া- সুন্দর পরিকল্পনার লাভদায়ক ফলাফল।
* চুমু নেওয়া- ভাল বন্ধুত্তের প্রাপ্তি
* নদীতে সাঁতার- রোগমুক্তি
* মৃতদেহ- রোগমুক্তি:



* মাছ-স্বপ্নে মাছ দেখাটা সৌভাগ্যের লক্ষণ। বিশেষ করে যদি স্বপ্নে যদি দেখেন মাছ ধরছেন, তাহলে অর্থ প্রাপ্তি হবে। আর যদি মাছ ফসকে যায় তাহলে টাকা আসবে, তবে তা খরচও হয়ে যাবে।
* গরু -স্বপ্নে নিজের গরু দেখা মানে হল ধনসম্পত্তি প্রাপ্তি হবে। আর যদি মরা গরু দেখেন তাহলে সম্পদ হাতছাড়া হবে।
শারিরিক সম্পর্ক-স্বপ্নে কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখলে বা কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হতে দেখলে বুঝবেন যে আপনি নিঃসঙ্গ বোধ করছেন।
* দাঁত নড়া- স্বপ্নে দাঁত নড়তে দেখলে নিকট আত্মিয় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর দাঁত পড়ে যাওয়া দেখলে নিকট আত্মীয় কেউ মারা যাবে। নতুন দাঁত গজাতে দেখলে সম্পত্তি লাভ হবে।
* গাছ- ফলভরতি গাছ দেখার অর্থ হল ধনসম্পত্তি লাভ। গাছ থেকে নিজেকে ফল পাড়তে দেখলে অর্থ প্রাপ্তি হবে।
* আগুন লাগা- গায়ে আগুন লাগা দেখলে পেটের সমস্যা হয়। সেটা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও হতে পারে। এর আরেকটি অর্থ হলো বিপদগ্রস্ত হওয়া।
* পড়ে যাওয়া- স্বপ্নে উপর থেকে নিচে পড়ে যেতে দেখার অর্থ হল কাজে অবনতি। এর আরেকটি অর্থ রয়েছে, তা হল মানুষটি মানসিক চাপে রয়েছে এবং বিষণ্নতায় ভুগছেন।
* জলে ডুবে যাওয়া- স্বপ্নে জলে ডুবে যাওয়ার অর্থ হল বিপদগ্রস্ত হওয়ার আভাস। তবে বৃষ্টি হতে দেখা মানে নতুন কিছু পাওয়া বা আগমনের পূর্বাভাস।
* সাপ- স্বপ্নে সাপ দেখার অর্থ হলো শত্রু বৃদ্ধি। তবে সাপ মেরে ফেলতে দেখা মানে আপনি শত্রুকে পরাস্ত করতে পারবেন। স্বপ্নে সাদা সাপ দেখা সৌভাগ্য ও বংশবৃদ্ধির লক্ষণ।
* নগ্ন-নিজেকে নগ্ন দেখার অর্থ হলো সম্মানহানি। অন্য কাউকে নগ্ন দেখার অর্থ হল তার সম্মানহানি।
* নক্ষত্র- বয়স্কদের হতে প্রাপ্তি।
* এরোপ্লেন- পরিবেশের পরিবর্তন।
* প্লেনে চড়া- কাজের সময় সতর্ক্তা জরুরি।
* শিশু- ব্যবসাতে উন্নতি ও সুখি জীবন
* পিতা- ভাল সময়ের সূচনা
* আচেনা মাঠ দেখ- সুফল যুক্ত ভ্রমন
* অজগর দেখা- বিবাদের চিহ্ন।
* অলঙ্কার দেখা- সন্মান
* অগ্নি জ্বালতে গিয়ে বিপদে পড়া- চোখের রোগ হয়।

মাথার পেছনের চুটকি বা টিকির রহস্য কি?

মস্তক বা মাথার উপরে কিন্তু পিছন দিকে চুলের এক গুচ্ছ, ক্ষৌরকর্মের সময়, কাটা হয় না। এই গুচ্ছটিকেই টিকি বা শিখা কিম্বা চৈতন বলা হয়। টিকি রাখা হয় ব্রহ্মরন্ধ্রের উপরেই, ফলে ঐ স্থান বা সহস্রারের শক্তিকেন্দ্র বা শক্তিমর্ম মনে করে (বা নির্দেশ করে) সুরক্ষিত থাকে। যারা প্রকৃত অর্থে ব্রহ্মসাধনায় নিরত, তারা চলতি বাংলা ভাষায় টিকি বা শুদ্ধ ভাষায় শিখা রাখেন। টিকিকে অনেকে 'চৈতন'-ও বলে থাকেন অর্থাৎ যার চৈতন্য হয়েছে, এমন।
একজন হিন্দু মানুষের জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যুা পর্যন্ত ১৬টি সংস্কার এর মধ্যে ৮ম সংস্কার হল চুড়াকর্ম সংস্কার। শিশুর জন্মের পর তৃতীয় বর্ষে চুড়াকর্ম সংস্কার যজ্ঞ করতে হয় অর্থাৎ শিশুর মস্তক মুন্ডন বা কেশছেদন করতে হয়। এই সময়ই ঐ ব্রহ্মরন্ধ্রের স্থানে একগোছা চুল রেখে দিতে হয়। এইটিই শিখাা বা টিকি।
টিকি / শিখা প্রত্যেক সনাতনীর 'চুড়াকর্ম' সংস্কার থেকেই রাখতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় (এই শিখা এবং) সূত্র/যজ্ঞোপবিত এখন সম্প্রদায় বিশেষের জন্য রক্ষিত। তথাকথিত ব্রাহ্মণ পদবীধারীরা টিকি কেউ রাখেই না, বলতে গেলে। আমি কয়েকজন পুরোহিতকে ব্যক্তিগত ভাবে রাখিয়েছি। টিকি ছাড়া ব্রাহ্মণ-পুরোহিত একদমই বিসদৃশ অবস্থা/ব্যবস্থা নির্দেশ করে। আসলে টিকির অবস্থান পরমপদের কোনখানে, তার বাহ্য প্রকাশ করে!
শুশ্রুত ঋষি মাথায় মুখ্য স্পর্শকাতর অংশটিকে 'অধিপতি মর্ম' হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। যা সমস্ত স্নায়ুর যোগসূত্র। শিখা বা টিকি ওই অংশটিকে নিরাপত্তা প্রদান করে বলেও বলেছেন। শরীরের নিম্নাংশ থেকে মস্তিষ্কের নীচে, ব্রহ্মরন্ধ্রে সুষুম্না স্নায়ু পৌঁছয়। যোগ অনুসারে ব্রহ্মরন্ধ্র ১০০০-(৫০*২০) পাপড়ি বিশিষ্ট পদ্ম এবং এটি শীর্ষ সপ্তমচক্র। এটি জ্ঞানের কেন্দ্র। গিঁঠ বাধা শিখা বা টিকি কেন্দ্রটিকে উত্‌সাহিত করে এবং 'ওজঃ' নামে পরিচিত এর সূক্ষ্ম শক্তিকে সংরক্ষিত করে।

রাশি অনুযায়ী গণেশ মন্ত্র পাঠ করুন, সমস্যার সমাধান হবে

গণেশের সাধনা করে জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। গণেশের কৃপালাভ করলে সমস্ত কাজেই সিদ্ধিলাভ হয়। পুরাণে বলা হয়েছে যে, গণেশজির ১২টি নামের অসীম মাহাত্ম্য। এই ১২টি নামের সঙ্গে ১২টি রাশি যুক্ত। এখন দেখে নেওয়া যাক আপনার রাশি অনুযায়ী কে কোন মন্ত্র পাঠ করবেন ---

রাশি গণেশজির নাম গণেশজির মন্ত্র
--- ---- ------ ------ ----- ---- ------ --- ----- -----

মেষ -- বক্রতুণ্ড -- ওঁ বক্রতুণ্ডায় নমঃ

বৃষ -- একদন্ত  -- ওঁ একদন্তায় নমঃ

মিথুন -- কৃষ্ণপিঙ্গাক্ষ -- ওঁ কৃষ্ণপিঙ্গাক্ষায় নমঃ

কর্কট -- গজবক্ত্র -- ওঁ গজবক্ত্রায় নমঃ

সিংহ -- লম্বোদর -- ওঁ লম্বোদরায় নমঃ

কন্যা -- বিকট -- ওঁ বিকটায় নমঃ

তুলা -- বিঘ্নরাজেন্দ্র -- ওঁ বিঘ্নরাজেন্দ্রায় নমঃ

বৃশ্চিক -- ধূম্রবর্ণ -- ওঁ ধূম্রবর্ণায় নমঃ

ধনু --  মহোদর -- ওঁ মহোদরায় নমঃ

মকর -- বিনায়ক -- ওঁ বিনায়কায় নমঃ

কুম্ভ -- গণপতি -- ওঁ গণপতয়ে নমঃ

মীন -- গজানন -- ওঁ গজাননায় নমঃ

ক্রিয়াটি কী ভাবে সম্পন্ন করবেন --- প্রথমে শ্রী গণেশের পূজা করুন। তারপর প্রতি দিন প্রথমে উপরে লেখা ১২টি গণেশ-মন্ত্র এক বার করে পাঠ করুন। তার পর আপনি আপনার রাশি অনুসারে গণেশজির মন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন। ভক্তিভরে এই ভাবে জপ করলে জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।




গণেশের ধ্যান –

“খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং
প্রস্যন্দন্মদ্গন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্।
দন্তাঘাতবিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দূরশোভাকরং
বন্দে শৈলসুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।।”

------- অর্থাৎ, “যিনি খর্বাকৃতি, স্থূলশরীর, লম্বোদর, গজেন্দ্রবদন অথচ সুন্দর; বদন হইতে নিঃসৃত মদগন্ধে প্রলুব্ধ ভ্রমরসমূহের দ্বারা যাঁহার গণ্ডস্থল ব্যাকুলিত; যিনি দন্তাঘাতে শত্রুর দেহ বিদারিত করিয়া তাহার দন্ত দ্বারা নিজ দেহে সিন্দূরের শোভা ধারণ করিয়াছেন; সেই পার্বতীপুত্র সিদ্ধিদাতা ও কামদাতা গণপতিকে বন্দনা করি।”

গণেশের প্রণামমন্ত্র –

"একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননং।
বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।।"

--------- অর্থাৎ, “যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।”

গণেশের প্রার্থনামন্ত্র –

দেবেন্দ্রমৌলিমন্দারমকরন্দকণারুণাঃ।
বিঘ্নং হরন্তু হেরম্বচরণাম্বুজরেণবঃ।।

---------- অর্থাৎ, “দেবরাজ ইন্দ্রের মস্তকে বিরাজিত মন্দারপুষ্পের পরাগসমূহের দ্বারা রক্তিম হেরম্বের পাদপদ্মের রেণুসমূহ আমার বিঘ্নহরণ 

গীতায় মানুষের খাদ্য সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

গীতায় মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত মোট ৩ টি শ্লোক রয়েছে। এই তিনটি শ্লোক ছাড়াও অনেকেই আরো ১ টি শ্লোক নিয়ে সেটাকে খাদ্য সম্পর্কিত স্থানে নিয়ে যায়। যদিও সেই শ্লোকটির সাথে মানুষের খাদ্যের কোন সম্পর্ক নেই। আবার ইসকনের গীতা অর্থাৎ গীতা যথাযথতে খাদ্য সম্পর্কিত শ্লোক পাওয়া যায় মোট ৫ টি! সেটা একটু পর বুঝিয়ে বলছি। প্রথমেই মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত ৩ টি শ্লোকে নজর দেই। শ্রী কৃষ্ণ মানুষের খাদ্য সম্পর্কে বলেছেন ১৭ তম অধ্যায়ে। এই অধ্যায়টি শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ। মানুষ মোট তিন ধরণের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। তাদের শ্রদ্ধা তিন ধরণের হয়ে থাকে। সেই তিন ধরণের শ্রদ্ধা নিয়েই এই অধ্যায়। সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক।
মানুষের খাদ্যকেও গীতার ১৭/৮; ১৭/৯; ১৭/১০ এই শ্লোক গুলোতে খাদ্য আলোচনা করেছেন। সেখানে খাবারকে সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। মানুষের চরিত্রকেও সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। যে যেমন চরিত্রের সে তেমন আহার পছন্দ করেন। এমনটাই বলা হয়েছে শ্লোক গুলোতে। যেমন সাত্ত্বিক খাবারের বর্ণনা করতে গিয়ে শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন,
‘‘যে সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য....., পুষ্টিকর, মনোরম সেই গুলো সাত্ত্বিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
রাজসিক খাবারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,
‘‘তিক্ত, অম্ল, অতি উষ্ণ, অতিলবণাক্ত... সেগুলো রাজসিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
তামসিকের বর্ণনায় বলেছেন,
‘‘দূর্গন্ধময়, রসহীন, বাসী, উচ্ছিষ্ট.... সেগুলো তামসিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
লক্ষ্যকরুণ, এখানে কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ খাবার নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা করেনি। বলা হয়েছে মানুষের চরিত্র অনুযায়ী সেই সকল খাদ্য তাদের প্রিয় হয়। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। গীতায় শ্রী কৃষ্ণ সকল কর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। এখন সকল জ্ঞান অনুধাবন করে আপনি নিজ ইচ্ছামত কার্য সম্পন্ন করবেন নিজের উপলব্ধির উপর নির্ভর করে। গীতা জ্ঞান অনুধাবন করে বুঝা যায় সকল কিছুতেই সাত্ত্বিক ভাব বজায় রেখে চলতে হয়, সাত্ত্বিক খাবার খেতে হয়। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে সাত্ত্বিক খাবার কেন ? এর কারণটা সাত্ত্বিক খাবারের বর্ণনায় খুব ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে
সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য....., পুষ্টিকর, মনোরম। এখন এই সাত্ত্বিক খাবার খোঁজতে গেলে প্রথম আসবে সুষম এবং প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। কারণ অনুভবে দেখা যায় আমেরিকান, ইউরোপিয়ানরা বুদ্ধিবিকাশ ও জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে। তাদের প্রধান খাদ্য প্রোটিন জাতীয়। গমে ৯৫% আমিষ/প্রোটিন থাকে। মাংস, ডিম ইত্যাদি তাদের প্রধান খাবার। দুধ সুষম খাদ্য, এটা কারো অজানা নয়। এই দুধে ৩/৪% প্রোটিন রয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় বলা প্রয়োজন। যেকোন খাদ্যই সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক হতে পারে। এই উদাহরণ দিতে আমরা দুধকে নির্বাচন করতে পারি। দুধ সাত্ত্বিক খাদ্য। কারণ সাত্ত্বিক সূত্র অনুসারে এটি প্রথম স্থানে। এবার এই দুধ যদি আপনি অতি উষ্ণ ভাবে গ্রহন করেন তাহলে সেটি রাজসিকে পরিণত হচ্ছে। আবার এই দুধ যদি আপনি একসপ্তাহ খোলা স্থানে রেখে দিয়ে তারপর দূর্গন্ধযুক্ত ভাবে পান করেন তাহলে সেটি তামসিক খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। ধরুন আপনি উদ্ভিদ দিয়ে শাখ বা তরকারী রান্না করছেন সেটি সাত্ত্বিক খাবার। কিন্তু লবন দিলেন অধিক মাত্রায়। এখন কিন্তু এটি রাজসিক। আবার এই তরকারি উচ্ছিষ্ট করে যদি খেয়ে নেন তাহলে নিশ্চই তামসিক হয়ে যাচ্ছে। আবার ধরুন, আমদের প্রধান খাদ্য ভাত। আমরা ভাত খেয়ে সুস্থ থাকি। কিন্তু যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তারা কিন্তু ভাত খেয়ে অসুস্থ অনুভব করবে। অর্থাৎ আমাদের সাত্ত্বিক ভাত তাদের কাছে রাজসিক হিসেবে পরিণত হচ্ছে। গীতা সূত্র অনুসারে মিলিয়ে নিবেন। যাইহোক, তাহলে বুঝা গেল যেকোন খাবার সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক হতে পারে। স্থান কাল হিসেবে আপনি কিভাবে সেটা গ্রহন করছেন সেটিই আলোচ্য বিষয়।

কিন্তু সনাতন সমাজের অনেকেই খাদ্যের এই ৩ শ্লোক গুলোর উর্ধে গিয়ে একটি শ্লোকের ব্যখ্যা দিয়ে বলেন ভগবান বলেছে উদ্ভিদ অর্থাৎ নিরামিষ আহার করার জন্য। প্রথমেই এখানে একটি কথা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন যে, উদ্ভিদ নিরামিষ নয়। প্রোটিনের দুটি ভাগ। একটি প্রানিজ অন্যটি উদ্ভিজ্জ। তাই উদ্ভিদ মানেই আমিষ বিহিন হবে এটা মূর্খের প্রলাপ। আমরা গম খাই, শাখ সবজী খাই আমিষ বিহিন হিসেবে কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে প্রায় সকল খাদ্যেই আমিষের উপস্থিতি আছে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে এই আমিষ নিরামিষ ভাগ হলো কিভাবে ? যদি ভগবান বলে থাকেন ‘আমাকে পত্র পুষ্প জল নিবেদন করে গ্রহন করো তাহলে আপনারা এটা বলুন যে উদ্ভিদ অর্থাৎ লতাপাতা জল খাওয়ার জন্য। সেখানে নিরামিষ নাম দিয়ে দেওয়াটা কি মূর্খতারূপ নয় ? আমার জানা মতে আমিষ নেই এমন খাদ্য হলো পিয়াজ আর রসুন। যদি নিরামিষের কথাই বলেন তাহলে তো পিয়াজ রসুন খাওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ এগুলোতে আমিষের ছিটে ফোটাও নেই। এখন আবার আপনারা এখানে নিরামিষের কথা বলবেন না। এখন বলবেন, পিয়াজ রাজসিক খাবার আর রসুন তামসিক খাবার। যদি রাজসিক আর তামসিক হিসেবেই চলেন তাহলে আমিষ নিরামিষ কোথা থেকে নিয়েছেন ? বৈদিক কোন গ্রন্থেই আমি এই আমিষ নিরামিষ শব্দ পাইনি। যাইহোক, যে শ্লোকটির কথা বলছিলাম সেটি গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২৬ তম শ্লোক।
এই শ্লোকের বাংলা অর্থ হলো, ‘‘যিনি আমাকে ভক্তিপূর্বক পত্র, পুষ্প, ফল, জল অর্পণ করেন, মন থেকে প্রযত্নশীল সেই ভক্তের ঐসব সামগ্রী আমি গ্রহন করি’’। ধারণা করা হয় এই শ্লোক থেকেই মূলত নিরামিষ খাওয়ার নিয়মটি এসেছে। শ্লোকটি ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন। প্রথমে বলা হয়েছে যিনি ভক্তিপূর্বক..., শেষের দিকে বলা হয়েছে মন থেকে প্রযত্নশীল। অর্থাৎ আপনি ভগবানকে পত্র, পুষ্প, ফল, জল দিলেই হবে না। সেই সাথে প্রথমেই ভক্তিকে জাগ্রত করতে হবে এবং মন থেকে প্রযত্নশীল হতে হবে। তবেই ভগবান সেটি গ্রহন করবেন। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। ভগবান কি গ্রহন করেন ? কি চায় ভগবান আমাদের কাছে ?
ফুল ফল ? খাওয়া দাওয়া ? নাকি ভক্তের ভক্তি ?? পুরাণ থেকে জানা যায় মহাকালী পরমেশ্বরী ‘মাতঙ্গী’ রূপে এক চণ্ডালিনী ভক্তের এঁটো খাবার গ্রহন করেছিলেন। তাহলে কি আমরা বুঝব পরমেশ্বরী এঁটো খাবার পছন্দ করেন ? চিন্তা করুণ, উনি এঁটো খাবার গ্রহন করেছিলেন নাকি ভক্তের ভক্তি গ্রহন করেছিলেন ?
মহাভারত থেকে জানা যায়, সঞ্চয়ের স্ত্রী ছিলেন গোবিন্দ ভক্ত। গোবিন্দ যখন উনার গৃহে গিয়েছিলেন তখন উনি এতটাই আবেগপূর্ণ হয়ে গেলেন যে উনি কলা দিতে গিয়ে কলা না দিয়ে কলার খোসা দিয়েছিলেন। আর গোবিন্দ সেই খোসাটুকুই খেয়ে নিয়েছিলেন পরম তৃপ্তিতে! এখন এই ঘঠনা থেকে কি আমরা বুঝে যাব গোবিন্দ কলার খোসা ভালোবাসে ? না। ভগবান আমাদের কাছে কিছু খেতে চান না। উনি আমাদের কাছে ভক্তি চাইছেন। ভক্তের ভক্তিই উনার কাছে পরম চাওয়া। এই বিষয়টা আরো পরিষ্কার হবে যদি আপনি সম্পূর্ণ নবম অধ্যায়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেন। নবম অধ্যায়টি রাজগুহ্য যোগ। এই সম্পূর্ণ অধ্যায়ে ভগবান শিক্ষা দিয়েছেন, কিভাবে ভক্তির উদয় করতে হয়। কিভাবে ভক্তির মাধ্যমে ভগবান লাভ করা যায় সেই শিক্ষাই শ্রী কৃষ্ণ দিয়েছেন। তাই অকপটে বলা যায় মানুষের খাবার নিয়ে এই অধ্যায়ে শ্রী কৃষ্ণ কোন আলোচনা করেনি। তাছাড়া গীতায় একই প্রসঙ্গ কখনোই দুই অধ্যায়ে বা বারংবার বলা হয়নি।
এই হলো মোট চারটি শ্লোক। এবার ইসকনের গীতায় এই চারটি শ্লোক ছাড়াও মানুষরের খাদ্য সম্পর্কি বাড়তি যে শ্লোকটি পাওয়া যায় সেটি ৩য় অধ্যায়ে ১৪ তম শ্লোকের প্রথম লাইন। এই শ্লোকে অন্নের কথা বলা হয়েছে। চলুন শ্লোকটির প্রথম লাইনটা অর্থ সহ ভালো ভাবে দেখে আসি।
‘‘অন্নদ্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাদন্নসম্ভবঃ’’
শব্দার্থঃ অন্নদ্ = অন্ন থেকে, ভবন্তি = উৎপন্ন হয়,
ভূতানি = প্রাণী বা জড় দেহ, পর্জন্যাদ = বৃষ্টি থেকে। অন্ন = অন্ন, সম্ভবঃ = উৎপন্ন হয়।
প্রকৃত অনুবাদ = বৃষ্টি থেকে অন্ন উৎপন্ন হয়। অন্ন থেকে প্রাণী উৎপন্ন।
এখন এই শ্লোক থেকে গীতা যথাযথ অর্থাৎ ইসকনের গীতা অনুবাদ লিখেছে, ‘‘অন্ন খেয়ে প্রাণীগন জীবন ধারণ করে।’’
উনারা এই অন্ন খেয়ে জীবন ধারণ কোথায় পেয়েছেন সেটা উনারাই জানেন।
তো, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল গীতায় মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত সরাসরি কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আপনি কেমন আহার করবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত। তবে অবশ্যই চেস্টা করবেন সাত্ত্বিক আহার গ্রহন করার জন্য। অর্থাৎ, শরিরের সম্পূর্ণ সুস্থতা, মেধা, জ্ঞান বৃদ্ধি হয় এমন খাদ্য গ্রহন করুন।

Monday, September 2, 2019

শিব লিঙ্গ নিয়ে বিস্তারিত

 আজ যে পোস্টটি করতে চলেছি, আশা করি এ বিষয়ে বর্তমানকালে বা তার আগে বাণেশ্বর শিবলিঙ্গ নিয়ে এমন প্রামাণ্য দলিল আর কোথাও পাওয়া যায় নি। বহু আলোচিত বিভিন্ন প্রকার লিঙ্গ সম্বন্ধে বহু কিংবদন্তী শুনলেও কেউই এ বিষয়ে যথার্থ আলোকপাত করেননি বলেই আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। তাই এই বিষয়ে লিখতে বসা।

শিবলিঙ্গ দু’প্রকার-অকৃত্রিম ও কৃত্রিম। স্বয়ম্ভূলিঙ্গ, বাণলিঙ্গ প্রভৃতিকে অকৃত্রিম লিঙ্গ বলে। ধাতু মাটি পাথর দিয়ে গড়া লিঙ্গকে বলে কৃত্রিম লিঙ্গ বা ভৌব লিঙ্গ। যে লিঙ্গের মূল পাওয়া যায় না বা স্থানান্তরিত করা যায় না তাকে বলে অনাদিলিঙ্গ। এছাড়া আর এক জাতীয় লিঙ্গ কে বলা হয় জ্যোতির্লিঙ্গ যা স্বয়ং মহাদেব নিজ থেকে প্রকট হয়ে বলেছেন এই জ্যতির্লিঙ্গগুলোতে এই কল্পে উনি সদা বিরাজমান।
ভারতবর্ষে জ্যোতির্লিঙ্গ আছে মোট বারোটি। মহাকালেশ্বর, সোমনাথ, ওঙ্কারেশ্বর, বৈজনাথ (বৈদ্যনাথ), নাগনাথ, রামেশ্বর, বিশ্বনাথ, ঘৃষ্ণেশ্বর, কেদারনাথ, ভীমাশঙ্কর, ত্র্যম্বকেশ্বর ও মল্লিকার্জুন – শিবপুরাণে উল্লিখিত এই জ্যোতির্লিঙ্গগুলি সমধিক আদৃত ও প্রসিদ্ধ।
উক্ত শিবলিঙ্গগুলি স্বয়ম্ভূ ও জ্যোতির্লিঙ্গ। অকৃত্রিম লিঙ্গও বটে। তবে জ্যোতির্লিঙ্গ ঠিক কী বস্তু তা বলা শক্ত। প্রলয় পয়োধিজলে যে লিঙ্গের আবির্ভাব হয় তা জ্যোতির্লিঙ্গ। আমার বিশ্বাস, ওই লিঙ্গের শক্তি যে যে অনাদিলিঙ্গে সন্নিবিষ্ট আছে, সেগুলিই জ্যোতির্লিঙ্গ।

মহানির্বাণতন্ত্রে স্বয়ং শিব পার্বতীকে বলেছেন, ‘দেবী! যে ব্যক্তি আগে আমার লিঙ্গের অর্চনা না করে অন্য দেবতার পুজো করে, তার পুজো কোনও দেবতাই গ্রহণ করেন না।’…

এবার মহানির্বাণতন্ত্রে শিলা ধাতু মাটি প্রভৃতি দিয়ে নির্মিত কৃত্রিম শিবলিঙ্গের কথা বলা হয়েছে। এই ধরণের কৃত্রিম লিঙ্গ আছে অসংখ্য। তার মধ্যে বিশেষ বিশেষ কতগুলি দ্রব্য দিয়ে নির্মিত শিবলিঙ্গের বিবরণ ও ফললাভের কথাই বলি।

পাথরে নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে মোক্ষলাভ ও আনুষঙ্গিক ভোগলাভ হয়ে থাকে। পার্থিব লিঙ্গ পুজো করলেও ভোগলাভ ও আনুষঙ্গিক মুক্তিলাভ হতে পারে। দারুময় লিঙ্গ ও বিল্ব-নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলেও ওই একই ফল হয়। সোনায় নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে লক্ষ্মী স্থিরতরা হন ও রাজ্যপ্রাপ্তি হয়। তামার তৈরি লিঙ্গ পুজোয় সন্তান বৃদ্ধি এবং রঙ্গ-নির্মিত (রঞ্জকদ্রব্য অর্থাৎ রাং ধাতু) শিবলিঙ্গ পুজো করলে পরমায়ু বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

পদ্মপুরাণের কথায়, পারদের শিবলিঙ্গ পুজোয় অতুল ঐশ্বর্য, মুক্তার লিঙ্গ পুজো করলে সৌভাগ্য, চন্দ্রকান্তমণি (Moon Stone) দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে দীর্ঘায়ু লাভ হয়। সমস্ত কাম্য বস্তু লাভ করতে পারা যায় সুবর্ণময় লিঙ্গ পুজো করলে।

জাগতিক সমস্ত কামনা পূর্ণ হয় হিরে, স্ফটিক, গুড় অন্ন প্রভৃতি দিয়ে শিবলিঙ্গ নির্মাণ করে পুজো করলে। তবে গুড় বা অন্ন দিয়ে সদ্যনির্মিত লিঙ্গই পুজো করা বিধেয়, পরদিন তা বাসি হবে, পুজো করা যাবে না।

লক্ষ্মণ সমুচ্ছয়ে কথিত আছে, গন্ধলিঙ্গ পুজো করলে মানুষের সৌভাগ্য বৃদ্ধি হয়। গরুড় পুরাণের কথায়, দু-ভাগ কস্তূরী, চারভাগ চন্দন, তিনভাগ কুমকুম (জাফরান), চারভাগ কর্পূর, এগুলো সব একত্র করে শিবলিঙ্গ নির্মাণ করলে তাঁকে গন্ধলিঙ্গ বলে। এই লিঙ্গ পুজো করলে মানুষ বন্ধুদের শিবসাযুজ্য হয় (পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার সংযোগ বা অভেদ, একত্ব বুঝায়)।

মুক্তিলাভ হয়ে থাকে পুষ্পময় লিঙ্গ পুজো করলে। পলি মাটি দিয়ে নির্মিত শিবলিঙ্গে বিবিধ কামনা সিদ্ধি, লবণের লিঙ্গে পুজো করলে সুখ ও সৌভাগ্যলাভ হয়। পাশ-নির্মিত (রজ্জু বা দড়ি) লিঙ্গ পুজো করলে উচাটন কার্য হয়ে থাকে। মূল দিয়ে (বৃক্ষাদির গোড়ার নিচের অংশবিশেষ, শিকড়) তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে শত্রুক্ষয় হয়।

ধুলো দিয়ে নির্মিত শিবলিঙ্গ ভক্তিপূর্বক কেউ পুজো করলে তিনি বিদ্যাধর পদ (স্বর্গের গায়করূপে দেবযোনিবিশেষ) প্রাপ্ত হয়ে পরে শিবসদৃশ হন। মানুষ লক্ষ্মীলাভ করতে পারে গোময় (গোবর) দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে। তবে গোময় স্বচ্ছ অর্থাৎ শূন্যে ধরা (ভূমিতে পতনরহিত) ও কপিলা গাভির হতে হবে। যব, গোধূম (গম), ধান দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজোয় লক্ষ্মীলাভ, পুষ্টি ও বংশবৃদ্ধি হয়। সিতাখণ্ড (মধুজাত শর্করা) নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে আরোগ্যলাভ, লবণ হরিতাল (পারদযুক্ত পীতবর্ণ বিষাক্ত ধাতব পদার্থ বিশেষ) শুণ্ঠী পিপ্পলী ও মরিচ মিশিয়ে তৈরি লিঙ্গ পুজো করলে বশীকরণ সিদ্ধ হয়।

গব্যঘৃতের লিঙ্গে বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা, লবণ নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি হয়। তিল পিষে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজোয় সমস্ত কামনা সিদ্ধ, তুষের লিঙ্গে মারণ কার্য, ভস্ম দিয়ে তৈরি লিঙ্গ পুজো করলে যাবতীয় অভিপ্রেত সিদ্ধ হয়। গুড়ের শিবলিঙ্গে প্রীতি বৃদ্ধি, গন্ধদ্রব্য (চন্দনাদি যে কোনও গন্ধদ্রব্য) দ্বারা নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে প্রভূত পরিমাণে গুণশালী হতে পারা যায়।

শর্করায় তৈরি লিঙ্গ পুজোয় শত্রু সংহার হয়ে থাকে। কাঠের তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে দারিদ্র আসে। দই দিয়ে তৈরি করা শিবলিঙ্গ পুজোয় কীর্তি লক্ষ্মী ও সুখসৌভাগ্য বৃদ্ধি হয়। ধানের লিঙ্গ পুজোয় ধানলাভ, ফলের শিবলিঙ্গ পুজোয় ফললাভ, ফুলের শিবলিঙ্গ পুজো করলে দিব্যভোগ ও পরমায়ু লাভ হয়।

ধাত্রীফলে নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে মুক্তিলাভ, ননী দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজোয় কীর্তি ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি, দূর্বাকাণ্ড দিয়ে প্রস্তুত লিঙ্গ পুজো করলে নিবারণ হয় অপমৃত্যুর। কর্পূরের শিবলিঙ্গ তৈরি করে পুজো করলে ভোগ ও মোক্ষলাভ হয়।

নবরত্নের মধ্যে মুক্তা নির্মিত লিঙ্গ পুজোয় সৌভাগ্য, স্ফটিক লিঙ্গে সর্বকামনাসিদ্ধি হয়। সোনার শিবলিঙ্গ তৈরি করে পুজো করলে অতুল ঐশ্বর্যভোগ, কাঁসা ও পিতল মিশ্রিত শিবলিঙ্গে শত্রুবিনাশ, শুধু কাঁসার তৈরি শিবলিঙ্গে কীর্তিলাভ, শুধু পিতলের লিঙ্গে ভোগ ও মোক্ষলাভ, রাং সিসা কিংবা লোহার লিঙ্গে শত্রুনাশ এবং অষ্টধাতু নির্মিত শিবলিঙ্গ পুজো করলে সমস্ত কামনাসিদ্ধি হয়। অষ্টধাতুর লিঙ্গ পুজোয় নিবারণ কুষ্ঠরোগ। সোনা রুপো ও তামা মিশিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে বিজ্ঞান বিষয়ে সিদ্ধিলাভ হয়ে থাকে।

যাদের ধনাকাঙ্ক্ষা আছে, তাদের কর্তব্য গন্ধপুষ্প নির্মিত লিঙ্গ, অন্নাদি দ্বারা নির্মিত অথবা কস্তূরী দ্বারা নির্মিত লিঙ্গ পুজো করা, এ কথা বলা হয়েছে কালোত্তরে।

মাতৃকাভেদ তন্ত্রে দ্বাদশ পটলে আছে, বালুকাময় শিবলিঙ্গ পুজো করলে কামনাসিদ্ধি, গোময় শিবলিঙ্গ পুজো করলে শত্রুবিনাশ হয়। উক্ত শিবলিঙ্গের মাহাত্ম্য এমনই, এতে ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষলাভ হয়ে থাকে।

‘শিবধর্ম’ নামক ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, ব্রহ্মা নিয়মিত শিলাময় লিঙ্গ পুজো করেন। এ জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রহ্মত্বপদ প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। ভগবান বিষ্ণু নিয়ত পুজো করেন ইন্দ্রনীলময় শিবলিঙ্গ। তার প্রভাবেই তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন সর্ব-পালকত্বরূপ বিষ্ণুত্বপদ। নিয়ত নির্মল স্ফটিকময় শিবলিঙ্গ পুজো করে থাকেন বরুণ। এ জন্যই তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন তেজোবল সমন্বিত বরুণত্বপদ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা শিবলিঙ্গে পূজা করতেন এবং মহাভারতে শ্রীষ্ণের পরিচয় দিতে গিয়ে স্বয়ং ব্যাস দেব  বলেছেনঃ→
"স এস রুদ্রভক্তশ্চ কেশবো রুদ্রসম্ভবঃ।
সর্ব্বরুপং ভবং জ্ঞাত্বা লিঙ্গে যো আর্চ্চয়ত প্রভুম্।।"
অর্থাৎঃ→ যিনি জগদীশ্বর শিব কে সর্ব্বময় জানিয়া তাঁহার লিঙ্গে পূজা করিতেন, তিনি শিবাংশ জাত ও শিব ভক্ত সেই নারয়ণ এই হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ।।
(মহাভারত,,দ্রোণ পর্ব্ব-১৬৯/৬২)

যে সব শিবলিঙ্গের কথা বলা হয়েছে, এর মধ্যে যে কোনও একটি শিবলিঙ্গ পুজো করা সকলেরই কর্তব্য। লিঙ্গার্চনতন্ত্রে প্রথম পটলের কথা, সমস্ত পুজোর মধ্যে লিঙ্গ পুজোই শ্রেষ্ঠ ও মুক্তিদায়ক।

দেবাদিদেব সদাশিব পার্বতীকে বলেছেন, ‘দেবী, অচল শিবলিঙ্গ স্থাপনের মাহাত্ম্য তোমার কাছে বেশি আর কী বলব; এই শিবলিঙ্গ স্থাপন করলে মানুষ সমস্ত মহাপাতকাদি থেকে বিমুক্ত হয়ে পরমপদ লাভ করে’।






 বাণলিঙ্গ
ছবি : তিনটি আসল বাণলিঙ্গ
                                                    ছবি : তিনটি আসল বাণলিঙ্গ


বাণেশ্বর শিবলিঙ্গের আদি কাহিনী
------------------------------------------------------
শিবক্ষেত্র নর্মদাতীরে পরম শিবভক্ত বাণাসুর কঠোর তপস্যা করে শিবকৃপা লাভ করেন। তিনি প্রতিদিন সহস্তে সোয়া একলক্ষ মাটির শিবলিঙ্গ গড়ে বহু বছর পূজা করে এইসব মাটির শিবলিঙ্গ নর্মদা নদীজলে বিসর্জন করেন। তাঁর পূজায় মহাদেব সন্তুষ্ট হয়ে বর দেন যে, তাঁর পূজিত এই সকল শিবলিঙ্গ পৃথিবীতে বাণলিঙ্গ বা বাণেশ্বর শিবলিঙ্গ নামে বিখ্যাত হবে। ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হবে এইসব শিবলিঙ্গ। এই শিবলিঙ্গ একবার মাত্র পূজিত হলেই সহস্রবার পূজার ফলদান করে।

বাণলিঙ্গ কোথায় কিভাবে পাওয়া যায়
---------------------------------------------------------
গুজরাটে নর্মদাতীরে নর্মদার উত্তর তটে 'করোদ' বলে এক গ্রামে বাণাসুরের তপস্যার স্থান অবস্থিত। এইখানে নর্মদা নদীর মধ্যে জলের ভিতরে এক গুপ্ত কুণ্ড আছে যার নাম বাণকুণ্ড, এই কুণ্ডেই বাণাসুরের নিজহাতে পূজা করা সমস্ত মাটির শিবলিঙ্গ জলের মধ্যে ডুবে রয়েছে। কমপক্ষে অন্তত আঠারো বছর পর যখন বৈশাখ মাস মলমাস হয়, তখন আপনা আপনি এই কুণ্ড দৃষ্টিগোচর হয়। তখন বিশেষ তিথিতে মাত্র কয়েক দিনের জন্য কোটি কোটি বাণলিঙ্গ নর্মদার স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশে ছড়িয়ে যায়। তখন এখানে বিরাট মেলা বসে ও বহু ভক্ত সমাগম হয়। আবার তিথি ফুরালেই এই কুণ্ড নর্মদা মায়ের বুকের মধ্যে অন্তর্লীন হয়ে যায়। এই সময়ই বাণলিঙ্গ সংগ্রহ করতে হয়।

বাণলিঙ্গের আশ্চর্য গুণ
------------------------------------
এই শিবলিঙ্গ সম্পূর্ণ মাটির তৈরী, হাতে নিয়ে দেখলে মনে হয় যেন মাটি দিয়ে তৈরী করে রোদে শোকানো হয়েছে। শুকনো মাটি যেমন জল শোষণ করে তেমনি বাণলিঙ্গে এক ফোঁটা জল দিলে সাথে সাথে শুষে নেয়। বাণলিঙ্গ ঘষলে গুঁড়ো গুঁড়ো মাটি ঝরে পরে। আরো আশ্চর্য ব্যাপার, হাজার হাজার বছর জলের নীচে থাকলেও বাণলিঙ্গ জলে দ্রবীভূত হয় না।
আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া পরীক্ষা করে জানিয়েছে এগুলো প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয় নি, বরং বহু প্রাচীনকালে এগুলো মানুষের হাতে তৈরী করা, যা কালক্রমে আংশিক ভাবে পাললিক শিলায় পরিণত হয়েছে।

পরিতাপের বিষয়
----------------------------
সর্দার সরোবর বাঁধের জন্য নর্মদার বহু তীর্থের সর্বনাশ হয়েছে। কৃত্রিমভাবে জল সরবরাহের জন্য হয়তো ভবিষ্যতে কোনদিনই আর এই কুণ্ড দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।
অনেক বিখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত ধাবড়ীকুণ্ডের নর্মদেশ্বর শিবলিঙ্গ এমনভাবে বাণেশ্বর নামে বহুল প্রচলিত হয়ে গেছে যে, কি যে সত্য আর কি মিথ্যা তা 'দশচক্রে ভগবান ভূত' প্রবাদের মতই সত্য হবার উপক্রম। আজকাল পশ্চিমা বিভিন্ন ধর্ম ব্যাবসায়ীদের আগমন ঘটেছে। পরিতাপের বিষয় এদের হিন্দুরা মাথায় নিয়ে বসে আছে। আর এরাই বলছে শিবলিঙ্গ পূজা করা যাবে না বা গৃহে শিবলিঙ্গ রাখা যায় না, শিব হলেন দধি আর আমাদের দেবতা হলেন দুধ , শিব পরম বৈষ্ণব ইত্যাদি আসুরিক কথা। আদতে এরা মহাপাপী আর আমাদের দিয়েও পাপ করাচ্ছে। তাই সতর্ক থাকুন। 
হর হর মহাদেব! 
জয় ভোলেনাথ। 

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts